সোনার হরিণ হাতছাড়া হয়ে গেল হেলমেটধারীদের হামলায়
দেশের সেবায় একজন গর্বিত সেনা সদস্য হবেন, জীবনের লক্ষ ছিল তার। প্রাথমিক বাছাইয়ে চুড়ান্তভাবে তাকে বাছাই করা হয়েছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতা, নাগরিকত্ব সনদ ও বয়স প্রমানের জন্মসনদ নিয়ে ২৩ অক্টোবর খুলনা সেনা ক্যাম্পে দেখা করতে বলা হয়েছিল তাকে। নির্দিষ্ট দিন সময়মত হাজিরও হয়েছিলেন, কিন্ত শেষ পর্যন্ত চাকরি নামের সোনার হরিণ পাওয়া হলো না বরগুনার ইমনের।
কারণ, তার আগেই যে সর্বনাশ ঘটে গেছে। ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় হেলমেটপরিহিত অজ্ঞাত দুর্র্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। যথাসম্ভব চিকিৎসা নিয়ে পৌঁছেছিলেন ক্যাম্পে। কিন্ত মেরুদন্ডের ব্যথায় নির্দিষ্টসংখ্যক বুকডান শেষ করতে করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। ইমন এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
ইমন বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঢলুয়া এলাকার সেলিম আকনের ছেলে। সেনাবাহিনীর সদস্য হওয়ার জন্য খুলনায় ভর্তি পরীক্ষায় চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ফের ২৩ অক্টোবর সেনা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য যোগ দিতে বাড়ি ফিরেছিলেন। ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য। আজ কাল করে দু'তিনদিন ইমনকে ঘুরিয়ে অবশেষে ১৯ অক্টোবর বিকেলে ইমনকে ইউনিয়ন পরিষদে দেখা করতে বলেন রফিক। বিকেল গড়িয়ে সন্ধা, নানা অযুহাতে কালক্ষেপন করতে থাকেন রফিক। অবশেষে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়।
বাড়ি ফেরার পথে একটি মোটসাইকেলে তিনজন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি তার পিছু নেয়। স্থানীয় জুলমত খার ব্রিজের কাছাকাছি সড়কের অন্ধকার স্থানে মোটরসাইকেল থামিয়ে পেছন থেকে ভারি লোহার রড দিয়ে আঘাত করে একজন। অপর একজন মাথায় আঘাত করে। আঘাতে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারায় সে। হুঁশ হওয়ার পর চাচাত ভাই সাকিবকে ফোন করে ঘটনা জানালে সাকিবসহ পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেন।
যথাসম্ভব চিকিৎসা নিয়ে ২৩ অক্টোবর খুলনা সেনাক্যাম্পে যোগ দেয় ইমন। সেনা অফিসাররা তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নির্দেশনা দিয়ে ১৫বার বুকডান করতে বলেন। অন্যরা সবাই বুকডান সফলভাবে শেষ করলেও ১০ বারেই লুটিয়ে পড়ে ইমন। পরে সেনা কর্মকর্তারা তাকে ডেকে অফিসে নিয়ে শরীর পরীক্ষা করলে শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে প্রশিক্ষণ থেকে বাদ দিয়ে পরবর্তীতে চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
ইমনের বাবা সেলিম আকন বলেন, 'ছেলেটা আমার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে, এই বয়সে এমন ধকল কাটিয়ে ওঠা ওর জন্য কষ্টসাধ্য হবে। আমার বা ছেলের কোনো শত্রু আছে এমন জানা নেই। কারা কি কারণে হামলা করেছিল আমরা এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা'। ছেলেকে ঢাকায় চিকিৎসা দিয়ে বরগুনা ফিরে থানায় অভিযোগ করবেন বলে তিনি জানান।
যোগাযোগ করা হলে ঢলুয়া ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ইমনের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি হারিয়ে ফেলেছিল। ওর অনলাইন কপির জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল, শুক্র শনি দুদিন বন্ধ থাকায় আমি ওকে রবিবার আসতে বলেছিলাম। আছরের পরই সে আমার কাছ থেকে চলে যায়। আমি হামলার বিষয়ে কিছুই জানিনা'।
ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। কারা কি কারণে হামলা করেছে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে চাকরিতে যোগদানের জন্য সম্ভবত তারা সেটা করেনি।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, 'এরকম ঘটনার বিষয়ে আমরা জেনেছি। হামলাকারীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে'।