স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের ভিডিওগুলো কি বিরূপ প্রভাবও ফেলে?
টিকটকে আপনার হোমপেজেও যদি তাকে থরে থরে সাজানো খাবার দেখা যায়, সেইসঙ্গে প্রতিদিন কী নিয়ম মেনে কী খাবার খেলে কতোটুকু ক্যালোরি পাচ্ছেন সেই তথ্যও পেয়ে যান, হতে পারে আপনিও ফর ইউ পেজের পোস্ট দেখছেন। এটি অনেকটা নিজের একজন ব্যক্তিগত পুষ্টিবিদ, রাঁধুনি থাকার মতোই। কিন্তু এসব ভিডিও কি আসলেই মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে সাহায্য করে?
আপনি হাই ক্যালোরি খাবারের দিকে ঝুঁকতে চান বা খাদ্যতালিকায় আরও সবজি যোগ করতে চান, সব ক্ষেত্রেই কীভাবে কী করলে সুস্বাস্থ্য অর্জনের যাত্রা শুরু করতে পারবেন সে সম্বন্ধীয় ভিডিও আছে। ভিডিওগুলো দেখতেও বেশ নান্দনিক। এমিলিমারিকো, হ্যাপিহেলদিহাইলি, ক্যাটবেনের মতো অ্যাকাউন্টগুলো এসব ভিডিওর জন্য জনপ্রিয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব ভিডিও বেশ উদ্দীপনাদায়ক হলেও এই সাইটগুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য দেখা যায়। ইনস্টাগ্রামে সবকিছুই বাস্তবের চেয়ে অনেক চাকচিক্যে মোড়ানো মনে হয়। অন্যদিকে টিকটকে কিছুটা সাধারণত্বের ছোয়া দেখা যায়। শুধু ইনফ্লুয়েন্সারই এই অ্যাপে ভাইরাল হয় না, টিকটকের অ্যালগরিদম অনুযায়ী যে কারো কন্টেন্ট ভাইরাল হতে পারে। টিকটকের এই ভিডিওগুলো ইনস্টাগ্রামের বেশিরভাগ অবাস্তবরকম নিখুঁত ভিডিওর মতোও নয়। খুব সহজভাবে দৈনন্দিন ব্যবহার উপযোগী করে বানানো হয় এসব ভিডিও। একারণেই হয়তো টিকটকের তরুণ ব্যবহারকারীদের কাছে এসব ভিডিওর আবেদন বেশি। ব্যবহারকারীদের অনেকেই জীবনে প্রথমবার রান্না করেছেন এসব ভিডিও দেখেই। তবে টিকটকেরই আরেক রকম ভিডিও ফরম্যাট আছে, এসব ভিডিওতে খুব দ্রুত সবকিছু দেখানো হয়। একারণে প্রয়োজনীয় অনেক স্টেপই বাদ পড়ে যায়। ফলে এসব ভিডিওতেও বাস্তবজীবনের কিছুটা প্রতিচ্ছবি দেখা যায় মাত্র।
এ ধরনের ভিডিওর অ্যাকাউন্টগুলোও টিকটকে বেশ জনপ্রিয়। এএসএমআর রেসিপি ভিডিও ক্রিয়েটর এমিলি মারিকোর টিকটক ফলোয়ার ৮৮ লাখ। তার ব্যবহৃত হ্যাশট্যাগ 'হেলদি রেসিপি'র ভিউ ৪.৩ বিলিয়ন। প্রতিদিনই এসব ভিডিও দেখে মানুষ রান্নার চেষ্টা করছে, ফলাফলও সবসময় ভিডিওর অনুরূপ হয় না।
অনেকেই ভিডিওগুলো দেখে উৎসাহিত হয়ে বিভিন্ন জিনিস কিনে প্রতিটি ধাপ মেনে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা একেবারে হুবহু হয়ে ওঠে না। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার আশায় অনেকে প্রাথমিক সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেন ভিডিওর নির্দেশনা অনুযায়ী। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে স্বল্প রিসোর্স নিয়ে সবকিছু আর ভিডিওগুলোর মতো সহজ মনে হয় না, হতাশ হয়ে যান অনেকেই। রান্নাঘরের সবকিছু লেবেলিং করে, সাজিয়ে রান্না করতে বসে যান। এসব ভিডিওর নির্দেশনা মেনে সব করলেই তাদের মতো স্বাস্থ্যকর জীবন পাওয়া এমন আশা থাকে অনেকেরই।
কিন্তু বাধ সাধে বাস্তবতা। পড়াশোনা কিংবা চাকরি বা জীবনের নানা ব্যস্ততা সামলে প্রতিদিন এসব প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থাকে না অনেকের। রান্নাঘরও দেখতে ভিডিওর মতো সাজানো-গোছানো পরিপাটি থাকে না। প্রতি সপ্তাহে অরগানিক খাবার কিনে প্রস্তুতি নেওয়াটাও খরচসাধ্য না অনেকের জন্য। এসব-ই খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তারপরও অনেকে মনে করে বসেন তারা বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। ভিডিওতে শুধু অল্প কিছু অংশ দেখানোয় এই পুরো প্রক্রিয়ার কষ্টসাধ্য বিষয়গুলো আমাদের চোখে পড়ে না। একারণে আত্মবিশ্বাস কমে আসে। এবং এভাবেই ভাবতে থাকায় এসব স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য উৎসাহ দেওয়া ভিডিওগুলোই এক সময় একদম বিপরীত প্রভাব রাখতে পারে আমাদের চিন্তার জগতে।
এর মানে কিন্তু এই নয় যে এসব ভিডিওর নির্দেশনাগুলো নেতিবাচক, বা এগুলো অনুসরণ করে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব না। বাস্তব জীবনে কোনোকিছু করতে গেলে তা ইডিট করা ভিডিওগুলো মতো চকচকে মনে হবে না, শুধু এতোটুকু মনে রাখলেই মানসিক চাপ কমে আসবে। তাহলেই নিজের অগোছালো রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দিনশেষে রান্না করার সময় নিখুঁত হচ্ছে না ভেবে আর নিরুৎসাহিত হবেন না।