আইনের বিধান অনুসারে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে ৫৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে। এ অবস্থায় কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
বিবৃতিটি নিচে প্রকাশ করা হলো:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।'
সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে 'আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে' নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও, গত ৫০ বছরে কোনো সরকারই এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। গত দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। এড হক ভিত্তিতে সৃষ্ট ওই দুটি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে গঠিত রকিবউদ্দিন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন তাদের চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের উপর ব্যাপক অনাস্থা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে, তাই নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে, যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা। এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে ও সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
একইসঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতে পারে সে ব্যাপারে সংস্কার পদক্ষেপের কথা এখন থেকেই ভাবতে।
প্রস্তাবিত আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারিত করতে ও একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান রাখতে হবে। এই অনুসন্ধান কমিটি দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হতে হবে, যাতে সকল নির্বাচনী অংশীজনদের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
গঠিত অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আইনে বিধৃত যোগ্যতার মানদণ্ডের আলোকে কিছু সৎ, নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের একটি প্যানেল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা। স্বচ্ছতার অংশ হিসেবে কোন কোন ব্যক্তিদেরকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটি প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করছে তাদের নাম প্রকাশ ও গণ শুনানীর আয়োজন করা এবং কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য সেসব নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিধান আইনে রাখতে হবে।
আমরা আশা করি যে সঠিক ব্যক্তিদেরকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। নাগরিক হিসেবে মতামত প্রদানের মাধ্যমে আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে পারি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন:
১. ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এমিরেটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২. ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
৩. এম হাফিজউদ্দিন খান
অবসরপাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৪. ড. আকবর আলী খান
অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৫. রাশেদা কে চৌধুরী
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৬. বিচারপতি আব্দুল মতিন
সাবেক বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৭. ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
সাবেক নির্বাচন কমিশনার
৮. ড. হামিদা হোসেন
মানবাধিকারকর্মী
৯. ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
১০. আলী ইমাম মজুমদার
সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব
১১. আবু আলম শহীদ খান
সাবেক সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়
১২. মহিউদ্দিন আহমদ
সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
১৩. ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতিবিদ
১৪. খুশী কবির
মানবাধিকারকর্মী
১৫. অধ্যাপক পারভীন হাসান
ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
১৬. ড. বদিউল আলম মজুমদার
সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
১৭. ড. ইফতেখারুজ্জামান
নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
১৮. অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ
২০. ড. আহসান মনসুর
অর্থনীতিবিদ
২১. জেড. আই খান পান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২২. ড. শাহদীন মালিক
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৩. মুনিরা খান
সাবেক সভাপতি, ফেমা
২৪. শিরিন হক
সদস্য, নারীপক্ষ
২৫. সালমা আলী
সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি
২৬. ব্যারিস্টার সারা হোসেন
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোট
২৭. শাহীন আনাম
নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
২৮. ফারাহ কবির
কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশন এইড
২৯. অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩০. মির্জা তাসলিমা সুলতানা
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. আবদুল লতিফ মন্ডল
সাবেক সচিব
৩২. সঞ্জীব দ্রং
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
৩৩. ড. শহিদুল আলম
আলোকচিত্র শিল্পী
৩৪. শারমিন মুরশিদ
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্রতী
৩৫. শামসুল হুদা
নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট
৩৬. অধ্যাপক সি. আর আবরার
শিক্ষাবিদ
৩৭. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৩৮. অধ্যাপক আসিফ নজরুল
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯. অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ
লেখক
৪০. অধ্যাপক আকমল হোসেন
সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪১. অধ্যাপক স্বপন আদনান
অধ্যাপক ও গবেষক, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন
৪২. অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম
অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৪৩. সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ
সাবেক ব্যাংকার
৪৪. আবু সাঈদ খান
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
৪৫. অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৬. অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৭. গোলাম মোনোয়ার কামাল
নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
৪৮. জ্যোতির্ময় বড়ুয়া
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৪৯. অধ্যাপক নায়লা জামান খান
পরিচালক, ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন
৫০. জাকির হোসেন
প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
৫১. ফারুক ফয়সাল
আঞ্চলিক পরিচালক, আর্টিকেল ১৯
৫২. ড. আব্দুল আলিম
সিনিয়র ডিরেক্টর, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
৫৩. নূর খান লিটন
মানবাধিকারকর্মী।