আগামীতে গ্রামে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হবে
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড রোগীদের মধ্যে ৯০% রোগী নন-ভ্যাকসিনেটেড। এর মধ্যে ৭৫% গ্রামের। তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক। গ্রামের বয়স্ক মানুষদের টিকার আওতায় আনলে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই মৃত্যু কমাতে আগামীতে ঁগ্রামে ক্যাম্পেইন করে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (আইইডিসিআর) ডা. আ স ম আলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য জানান।
ডা. আ স ম আলমগীর বলেন, "টিকায় মৃত্যু কমে সেটি প্রমাণিত। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে গ্রামে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। তাই গ্রামের অধিক সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে গ্রামে শিশুদের ইপিআইয়ের টিকা দেয়ার মত ক্যাম্পেইন করে কোভিডের টিকা দেয়া হবে। এ বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে জানাবেন"।
টিকা নিয়ে গত চার মাস কিছুটা সংকট থাকলেও এখন তা কেটে গেছে বলে মনে করছে সরকার। নিয়মিত টিকা আসতে শুরু করেছে এবং পরিকল্পিতভাবেই টিকা দেয়া হচ্ছে।
সবাইকে করোনার টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে রোববার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, "করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা দেয়ার বিকল্প নেই। তাই মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আমরা এখন পর্যন্ত ২১ কোটি টিকার ব্যবস্থা করেছি"।
গ্রামের মানুষকে টিকার আওতায় আনতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী বলেন, "গ্রামের যারা সুরক্ষা অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন না তাদের অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া এনআইডি দেখে টিকা দেয়া হবে। প্রয়োজনে পরে সেসব নাম অনলাইন নিবন্ধন করে নেওয়া হবে"।
দেশে গত ২৬ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়, সেসময় নিবন্ধনের বয়স ছিলো ৫৫ বছর। পরে তা কয়েক দফা কমিয়ে বর্তমানে ১৮তে নামিয়ে আনা হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে নিবন্ধিত বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক ও ১৮ বছরের উর্ধ্বের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসএমএস দিয়ে দ্রুত করোনার টিকা প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্বিঘ্ন রাখতে এবং বেশিরভাগ নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে এখন থেকে পর্যায়ক্রমে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিককেই টিকা প্রদান করা হবে। এরই মধ্যে সরকারের আইসিটি বিভাগের আওতাধীন জাতীয় সুরক্ষা অ্যাপে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের শিক্ষার্থী ও ফ্রন্টলাইনারদের পরিবারের সদস্যরা যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন করতে পারে সে ব্যাপারে একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
দেশে এখন পর্যন্ত ২ কোটি ১২ লাখ ডোজ টিকা এসেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সরকারের হাতে এক কোটির বেশি টিকা আছে। আগামী মাসের মধ্যেই আরো দুই কোটি টিকা সরকারের হাতে চলে আসবে। এভাবে চীন থেকে তিন কোটি, রাশিয়া থেকে সাত কোটি, জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকাসহ আগামী বছরের শুরুর দিকেই সরকারের হাতে প্রায় ২১ কোটি টিকা চলে আসবে। ঠিক সময়ে এসব টিকা পেলে দেশের ৮০% মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, "দেশে এখন সিটি করপোরেশন এলাকায় মর্ডানা ও সিটি করপোরেশনের বাইরে সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে টিকা কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে, তাহলে আমরা কোভিডের মহামারি অতিক্রম করতে পারবো"। জাপান থেকে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দ্বিতীয় ডোজও শিগগিরই দেয়া শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল টিকার ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকাপ্রদান কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়।
এরপর ১ জুলাই থেকে প্রবাসী শ্রমিক, মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার মাধ্যমে আবার গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়। এখন দিনে গড়ে ৫০ হাজার মানুষ মর্ডানা, ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকা পাচ্ছেন।
এদিকে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার মানুষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "টিকা নেয়া মানুষদের মৃত্যু ঝুঁকি কম, তাই মানুষের জীবন বাঁচাতে দ্রুত ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা প্রদান করতে হবে"।