আবরার হত্যায় জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা
ছাত্রলীগের নৃশংসতায় নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িতদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের আগে ১৪ অক্টোবর বুয়েটে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিপরীক্ষা না নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক শেষে শুক্রবার রাতে বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে বাস্তবায়নের জন্য নতুন পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হচ্ছে--
১। আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে নোটিস জারি করা;
২। মামলার সব খরচ বহন ও তার পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বুয়েট প্রশাসন বাধ্য থাকবে সেটিও নোটিশে লেখা থাকতে হবে;
৩। বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে হলগুলো থেকে অছাত্র ও অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত; ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যালয় সিলগালা করা;
৪। আগে সংঘটিত শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে ঘটলে তা প্রকাশের জন্য ‘বিআইআইএস’ অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করা; সে সঙ্গে অ্যাকাউন্টটির পূর্ণ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করে দায়ীদের শাস্তি দিতে কমিটি গঠন;
৫। প্রত্যেক হলের সব তলায় সিসিটিভি ক্যামেরা যুক্ত করে সার্বক্ষণিক মনিটরিং।
এর আগে শুক্রবার বুয়েটে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন উপাচার্য। শিক্ষার্থীদের একটি অংশের সঙ্গে বুয়েট অডিটরিয়ামে ৫০ জন শিক্ষকককে নিয়ে অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বৈঠক করেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সেগুলো পূরণের আশ্বাস ও কিছু দাবির বিষয়ে প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপের কথা জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ১০ দফা দাবির বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ঘোষণা দেন, “নিজস্ব ক্ষমতাবলে আমি ক্যাম্পাসে সব ধরনের সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে আবরার হত্যায় জড়িত ১৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করছি।”
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ভিসি বলেন, ‘আবরার হত্যা মামলার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে বুয়েট প্রশাসন এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে র্যাগিং বন্ধ করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।”
শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আবরার হত্যার পর আমার কিছু ঘাটতি ছিল। আমি আশা করি পিতৃতুল্য মনে করে তোমরা আমাকে ক্ষমা করবে।”
তবে উপাচার্যের এ ঘোষণা দৃশ্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে যথার্থ ছিল না।
বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল-ই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে ৭ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
পরে বুয়েটের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুক এলাহী তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে আবরারকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।