জেলায় জেলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যোগ দিয়েছেন অভিভাবকেরাও; সংঘর্ষে আহত অনেক
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকেরাও। বিক্ষোভে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও বেশিরভাগ স্থানেই পুলিশের শিক্ষার্থীদেরকে বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে আওয়ামী লীগ ও এ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। এতে গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কুমিল্লায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ এবং ২০ জনের মতো আহত হয়েছেন।
এদিকে কুমিল্লার চান্দিনায় উপজেলা সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) গাড়িতে আগুন দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গাজীপুরে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করাসহ দুটি পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লায় গুলিবিদ্ধ ৫ শিক্ষার্থী
কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে জড়ো হলে এমপি বাহারের অনুসারীরা কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর, লিবার্টি চত্বর, ফৌজদারী ও পুলিশ লাইনসে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা শটগান, দেশীয় অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে।
বেলা ১২টার কিছু আগে কান্দিরপাড় এলাকায় পাঁচজন শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে তারা। দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, পুলিশসহ ছাত্রদের শান্ত করে চলে যাওয়ার কথা বলার পর পেছন থেকে আবার হামলা করে বাহারের অনুসারীরা।
শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পুলিশ লাইনসের দিকে এলে গুলি ছোড়ে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা। এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বাহারের অনুসারীরা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করেন।
এদিকে বেলা ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় উপজেলা সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) গাড়িতে আগুন দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
গাজীপুরে পুলিশের ২ গাড়িতে আগুন
গাজীপুরের চন্দ্রা, মাওনা ও শিমুলতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
শনিবার (৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে এগারোটা দিকে গাজীপুরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ও আশাপাশ এলাকায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন।
এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উত্তেজিত ছাত্ররা একটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেওয়া হয় পুলিশের দুটি গাড়িতে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে।
লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা
শনিবার বেলা ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঝুমুরের ইলিশ চত্বরে এসে বেলা ১২টা পর্যন্ত অবস্থান নেন।
বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। এ সময় পুলিশ সদস্যরা কিছুটা দূরত্বে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারীরা তাদের ওপর গতকাল শুক্রবার দুপুরে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জুমার নামাজের পর জেলাশহরের চকবাজার এলাকায় তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাইলে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে।
ফরিদপুর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ
ফরিদপুরে পুলিশের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুরে ফরিদপুর শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ ও ছাত্রসহ আহত হয় বেশ কয়েকজন। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ওই দিক থেকে কোটা আন্দোলনকারীরা শহর অভিমুখে রওনা দেন। তারা শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় এলাকায় পৌঁছালে সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীর উপস্থিত হয়।
কুষ্টিয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও
কুষ্টিয়ায় ১১টার দিকে শহরের সাদ্দাম বাজার মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর মিছিল নিয়ে তারা চৌরহাস মোড় প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি আবার মজমপুর রেলগেটে এসে আবস্থান নেয়।
এ সময় টহলরত পুলিশের গাড়ি দেখে শিক্ষার্থীরা 'ভুয়া ভুয়া' বলে হাততালি দিতে থাকেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভে স্লোগান দিতে থাকেন।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা বিক্ষোভকারীদের দখলে থাকে। এ সময় জরুরি সেবা যানবাহনসহ অ্যাম্বুলেন্সকে শিক্ষার্থীদের রাস্তা ফাঁকা করে পার করে দিতে দেখা যায়।
নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে সড়কে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয়ে মিছিল বের করেন তারা।
মিছিলটি শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ধরে ২ নম্বর রেলগেইট অভিমুখে যাত্রা করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা আলোক প্রজ্জালন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়। তবে আজ শহরে কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।
ময়মনসিংহে আন্দোলনে নেমেছেন মাদ্রাসা ছাত্ররাও
সকাল ১০টায় ময়মনসিংহ নগরের চরপাড়া মোড় এলাকায় 'কওমি আলেম সমাজ ও তৌহিদি জনতা'র ব্যানারে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। পরে তারা সেখানে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলোর মধ্যে আছে 'গণহত্যা' বন্ধ করে দায় স্বীকার করা, আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন ও অপরাধীদের দ্রুত বিচার কার্যকর করা, সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি, আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করা।
সাতক্ষীরাও শহরজুড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সাতক্ষীরা শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে খুলনা রোড মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন হাজারো শিক্ষার্থী। তাদের মিছিলে অভিভাবকদেরও অংশ নিতে দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনা রোড থেকে মিছিল শুরু হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা কোনো বাধা দেয়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের সহিংস দমন-পীড়নের প্রতিবাদে আজ (৩ আগস্ট) দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং আগামীকাল রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য 'সম্পূর্ণ অসহযোগ' আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা বলেছেন, 'আমরা সকল নাগরিককে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।'