ইংরেজি-মাধ্যম শিক্ষার্থীদের টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা
দেশের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থী, বিশেষ করে 'ও' লেভেল ও 'এ' লেভেল পরীক্ষার জন্য নিবন্ধিত প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন গ্রহণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ভ্যাকসিন নিবন্ধন নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এই জটিলতা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দিলেও এখনও অনেক স্কুলই কোনো নির্দেশনা পায়নি।
সরকারি-বেসরকারি কোনো কর্তৃপক্ষই দায়িত্ব না নেওয়ায় 'ও' লেভেল এবং 'এ' লেভেল পরীক্ষার জন্য নিবন্ধিত প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়টি আরও জটিলরূপ ধারণ করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নিবন্ধিত প্রাইভেট শিক্ষার্থীরা কোনো স্কুলের সঙ্গে যুক্ত নয়। সুতরাং, ভ্যাকসিনের জন্য তাদের তালিকা প্রদান করার মতো কোনো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা গেলেও সমাধান খোঁজা হচ্ছে।"
"সাধারণত স্কুলগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে থাকে। আমরা সেই তালিকা ভ্যাকসিন অ্যাপে যুক্ত করতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের তালিকা কারা পাঠাবে তা নিয়ে আমরা দ্বিধায় পড়েছি," বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "তালিকা না পেলে আমরা ভ্যাকসিন দিতে পারব না। এছাড়া, কতজন পরিক্ষার্থী প্রাইভেটে পড়াশোনা করছে, আমরা সেটাও জানি না।"
ভ্যাকসিন নেওয়া ছাড়া 'এ' লেভেলের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারবে না।
বাংলাদেশ ইংলিশ-মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রানুসারে, দেশের ২৫০টি নিবন্ধিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। পরীক্ষার্থীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই প্রাইভেট রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে 'ও' লেভেল এবং 'এ' লেভেল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
এমনকি ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার তদারকি করে থাকলেও ভ্যাকসিনের তালিকা তৈরি করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের মার্কেটিং বিভাগের হেড অব কমিউনিকেশনস আফরোজা শারমিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের কোনো তালিকা তৈরি করেনি ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও তারা কোনো ধরনের নির্দেশনা পাননি বলে জানান তিনি।
আফরোজা বলেন, "আমরা সরকারি উদ্যোগে সবসময় সহায়তা করে থাকি। সরকারের তরফ থেকে আমরা এখনও ভ্যাকসিন বা তালিকা পাঠানো বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিএম নিজাম উদ্দীন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, স্কুল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলেও তাদের কাছে প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের তালিকা নেই।
তিনি বলেন, "প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা ব্রিটিশ কাউন্সিল ও অন্যান্য জায়গা থেকে মুক্তভাবে আবেদন করে থাকে।"
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের টিকাদান প্রক্রিয়া সহজ ও নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় পৃথক একটি অ্যাপের কথা চিন্তা করেছিল।
দেশজুড়ে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদানের লক্ষ্যে গত ১৮ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ঢাকার বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রদানের নির্দেশ দেয়।
২৩ অক্টোবরের মধ্যে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ইমেইলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য জমা দিতে বলা হয়।
অবশেষে গত ১ নভেম্বর থেকে মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু করে। রোববার পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, দৈনিক ৩০ হাজার ডোজ টিকাদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিন কোটি শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
ঢাকায় আটটি কেন্দ্রে টিকা দিচ্ছে মাউশি। কেন্দ্রগুলো হলো: হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর কমার্স কলেজ, কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ ব্রিজ স্কুল ও মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল।
এর আগে ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের চার সরকারি স্কুলের প্রায় ১১২ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়।