বেশিরভাগ আইসিইউতে সুরক্ষা নেই, করোনায় এক সপ্তাহে তিন প্রধানের মৃত্যু
৭ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন। করোনা পজিটিভ হয়ে তিন সপ্তাহ স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি।
অধ্যাপক মির্জা নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ৫ দিন পর ৯ জুন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান ইমপালস হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ও সিনিয়র কনসাল্টেন্ট অধ্যাপক ডা. জলিলুর রহমান। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এরপর ১৩ জুন রাতে কোভিড পজিটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।
এ নিয়ে সাতদিনে করোনাভাইরাসে মারা গেলেন তিনজন আইসিইউ বিশেষজ্ঞ। এদিকে করোনা পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন।
আইসিইউ'র চিকিৎসকদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আইসিইউতে রোগীকে ভেন্টিলেটর দেওয়ার সময় অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ভেন্টিলেটর দেওয়ার সময় রোগীর অনেক কাছে যেতে হয় চিকিৎসকদের। এছাড়া দেশের বেশিরভাগ আইসিইউতে বাতাস নেগেটিভ প্রেশারে রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই আইসিইউতে কাজ করতে গিয়ে চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী আরও বলেন, যেসব চিকিৎসক মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই বয়স্ক। তাদের কো-মর্বিডিটি ছিল। কো-মর্বিড চিকিৎসকেরা কাজ করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের প্রেসিডেন্ট ডা. দেবব্রত বণিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আইসিইউতে কাজ করতে গিয়ে চিকিৎসকদের কোভিড-১৯ রোগীদের ফুসফুসে ভেন্টিলেশন করতে হয়। আইসিইউ'র চিকিৎসকদের মূলত নাক-মুখ দিয়ে কাজ করতে হয়। করোনাভাইরাস নাক-মুখ দিয়েই ঢুকে। তাই আইসিইউ'র চিকিৎসকেরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। রোগীকে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়ার সময়ও চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আইসিইউতে সাধারণত নেগেটিভ প্রেশার থাকে, হেপা ফিল্টার থাকে। যাতে নতুন বাতাস ঢুকে ভেতরের বাতাস বাইরে চলে যায়। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ আইসিইউতে সে ব্যবস্থা নেই। সে কারণে আমাদের আইসিইউগুলোতে ভাইরাস লোড বেশি হয়ে যায়। তখন যদি একটু মাস্কটা ঢিলে হয়ে যায় বা পিপিইতে একটু সমস্যা থাকে, তাতে চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যান। সে কারণে আইসিইউ'র চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। আর যাদের ইমিউনিটি কম, তারা মারা যাচ্ছেন।
ডা. দেবব্রত বণিক আরও বলেন, দেশে আইসিইউ বিশেষজ্ঞ অনেক কম। এর মধ্যে যদি কয়েক দিনের ব্যবধানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মারা যান, তাহলে এ ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হবে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা মারা গেলে চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষা- দুটিই ব্যাহত হবে।
আইসিইউতে বাতাসের নেগেটিভ প্রেশারের ব্যবস্থা করা ও অধিক জনবল নিয়োগের দাবি জানান এ চিকিৎসক। তিনি বলেন, আইসিইউতে বেশি চিকিৎসক নিয়োগ দিলে চিকিৎসকদের কর্মঘণ্টা কমবে, তাহলে আক্রান্তের ঝুঁকি কিছুটা কমবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৫ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০১১ জন চিকিৎসক।