করোনাভাইরাসের প্রভাব মৎস্য চাষে, শঙ্কায় চাষীরা
করোনাভাইরাসের কারণে চলমান এই দুর্যোগে রাজশাহীতে সংকটে পড়েছেন মাছচাষীরা। মাছ বিক্রি কমে এসেছে প্রায় এক চতুর্থাংশে। মাছ বিক্রি করতে না পেরে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
আগে যেখানে রাজশাহী থেকে ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন ১৫০ ট্রাক মাছ যেত, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০টি ট্রাকে। তারপরও সেই মাছ কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে চাষীদের। এছাড়া মাছ পরিবহনের ক্ষেত্রেও সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানা জটিলতার।
মৎস্য চাষীরা বলছেন, দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির কারণে মাছ কেনার ক্রেতা নেই বললেই চলে। ফলে খুব অল্প মাছ পরিবহন করা হচ্ছে। তা-ও বাধ্য হয়ে কম দামে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্য স্বাভাবিক সময়ে পাইকারী ক্রেতারা মৎস্য চাষীদের কাছে ভিড় করলেও বর্তমানে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
মৎস্য চাষীদের দাবি, দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ কার্প জাতীয় মাছের চাহিদা পূরণ হতো রাজশাহী থেকে। কিন্তু করোনাভাইরাসকালীন এই দুর্যোগে মাছ বিক্রি করতে না পেরে সংকটে পড়েছেন তারা।
মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহীতে মোট পুকুর রয়েছে ৫০ হাজার। সেখানে মৎস্য চাষী রয়েছেন ১৯ হাজার। রাজশাহীতে বছরে মাছ উৎপাদিত হয় ৮৫ হাজার টন। যা রাজশাহীর মোট চাহিদার চেয়ে ৩২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। গড়ে প্রতিদিন দেড়শ ট্রাক মাছ ঢাকায় যেত। প্রতি ট্রাকে গড়ে ৭০০ থেকে ৯০০ কেজি মাছ থাকত। কিন্তু এই দুর্যোগে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ ট্রাকে।
রাজশাহীর দুর্গাপুরের মৎস্যচাষী এসরাফআলী। তার ৪০০ বিঘার মতো পুকুর রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে মাছ বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি।
এসরাফ আলী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে এক ট্রাক মাছ যেত আমার। অথচ গত এক সপ্তাহ ধরে কোনো মাছই বিক্রি করতে পারছি না। ঢাকায় মাছের তেমন ক্রেতা নেই। আবার নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে ট্রাকচালকরাও যেতে চাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন মাছের খাদ্য, ওষুধ ও পানির জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। মাছের খাদ্য ও ওষুধের সংকট রয়েছে। তারপরও বেশি দামে কিনেই মাছের খাদ্য ও ওষুধ দিচ্ছি।
মৎস্যচাষী সমসের আলী জানান, আমার ১৫০ বিঘার মতো পুুকুর রয়েছে। প্রায় ৬০ বিঘার পুকুরের মাছ বিক্রি উপযোগী হয়েছে। অথচ মাছগুলো বিক্রি করতে পারছি না। সব মাছ পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক বিক্রির একটা পরিকল্পনা ছিল। কারণ অতীতে পহেলা বৈশাখের দিনই আমার ১০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। বৈশাখের প্রথম চার পাঁচ দিনে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি আগে। অথচ কেজিতে ৫০ টাকা লোকসান দিয়ে গত দুই দিনে তিন হাজার কেজি মাছ বিক্রি করলাম। উপায়ও নেই। কারণ একটা নির্দিষ্ট সময় পর মাছের লিভার ব্লক হয়ে যায়। তখন মাছ আর খাবার খেতে পারে না ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে।
দুর্গাপুরের শালঘড়িয়া গ্রামের মৎস্যচাষী বাচ্চু মিয়া বললেন, চৈত্র মাস চলছে। এই সময় পুকুরে পানি লাগে বেশি। ঘনঘন সেচ দিতে না পারলে পুকুর শুকিয়ে যায়। তারপরও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পুকুরে পানি সেচের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। এই বিদ্যুৎ সংযোগ না দিতে পারার কারণে আমার প্রায় ৬০ বিঘার জমির পুকুর শুকিয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যুৎ অফিস বন্ধ থাকায় সংযোগও নিতে পারছি। একদিকে মাছ বিক্রি করার লোকসান, আরেকদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে।
আইনাল হক নামে আরেক মৎস্যচাষীবলেন, পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে না কবে এই অবস্থার উত্তরণ ঘটবে। পরিস্থিতি ভালো হলেও মৎস্যচাষীরা লোকসানে পড়বেই। তখন একসঙ্গে সবাই পুকুরের মাছ উঠানোর কারণে বাজারে মাছের দাম কমে যাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, মাছ বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কমে আসছে। দীর্ঘদিন এই পরিস্থিতি থাকলে মৎস্যচাষীরা বড় ধরনের লোকসানে পড়বে।