করোনা আক্রান্ত বাড়ায় টাঙ্গাইলে মেঝেতে চলছে চিকিৎসা, পড়ে রয়েছে নবনির্মিত ভবন
টাঙ্গাইলে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের শয্যা ছাড়া মেঝেতেও রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জেলার এক মাত্র করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ায় অন্যান্য রোগীরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি ফ্লোরে অতিরিক্ত রোগীর সেবা চালুর বিষয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক। অধ্যক্ষের অবহেলার কারণে ভোগান্তি নিয়েই মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীরা।
গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টার ভবনে ৫০ শয্যার একটি করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য জেনারেল হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডকে করোনা ডেডিকেটেট ওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ৫৬টি শয্যা রয়েছে। এছাড়াও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১০টি শয্যা রয়েছে।
ওয়ার্ডে এখন উপচে পড়া ভিড়। জেলার গ্রাম অঞ্চলে জ্বর ও সর্দি কাশিতে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। পরীক্ষার পর অধিকাংশ রোগীর পজিটিভ রিপোর্ট আসছে
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মেডিকেল কলেজের ১৫ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ গত বছরের জুনে শেষ হয়েছে।
সাধারণ রোগীদের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নব নির্মিত ভবনে চিকিৎসা সেবা চালু বিষয়ে অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালককে ১ জুলাই চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চিঠিতে বলা হয়- 'জেলায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের জন্য নব নির্মিত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১ম ও ২য় তলায় জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।'
এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে পারেননি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন মিঞা।
এছাড়া, গত ৬ জুলাই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমানও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের সেবা কার্যক্রম শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার জন্য চিঠি দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল আমিন মিঞা দায়িত্ব অবহেলার কথা অস্বীকার করে বলেন, "হাসপাতালের নব নির্মিত ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ সংযোগ হলে দুটি নয় একটি ফ্লোরে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।"
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলে ৬৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আক্রান্তের হার ৩৯ দশমিক ৫১ শতাংশ।
জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৭৫ জন। এছাড়াও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাত জন ও উপসর্গ নিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলা মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৬ জন। গত জুন মাস থেকে করোনা বাড়তে থাকে। ১২ জুন থেকে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
২৫ ও ২৬ জুন আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশের নিচে থাকলেও পরে তা আবার বেড়ে যায়। জুলাই মাস থেকে আক্রান্তের হার ৪০ শতাংশের উপরে রয়েছে। ১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ ১০ জন ডাক্তার ও ৩৮ জন নার্স আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রায় শতভাগই ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত।
সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, "টাঙ্গাইলের রোগীদের প্রায় শতভাগই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আক্রান্ত। আইসিসিডিডিআর ল্যাবে পরীক্ষা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।"