গাজীপুরে সোয়েটার কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ-ভাঙচুর, অন্তত ১০জন আহত
গাজীপুরের নাওজোড় এলাকায় দিগন্ত সোয়েটার কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বুধবার সকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় হামলা, ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা অপর একটি কারখানায় ভাঙচুর চালায় এবং বেশ কিছু গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় শ্রমিক ও পথচারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আহতদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আশেপাশের বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, দিগন্ত সোয়েটার কারখানায় জ্যাকার মেশিন বসানোকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে সম্প্রতি ছাঁটাই আতঙ্ক দেখা দেয়।
এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়। এতে বলা হয়, 'যে ফ্লোরে যেদিন কাজ শেষ হবে তার একদিন পর চলতি মাসের পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর কাজের অর্ডার পাওয়া যাবে। তখন সকলকে কাজে যোগদানের জন্য ফোন করা হবে। ছুটিকালীন সময়ে শ্রমিকদের আইনঅনুযায়ী বেতন দেয়া হবে ২৫ নভেম্বর ও ২৭ ডিসেম্বর। ছুটির পর কাজে যোগ দেয়ার সময় শ্রমিকদের আইডি কার্ড হস্তান্তর করা হবে। প্রত্যেককে কারখানা খোলার সময় যোগদানের নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। কর্মরত শ্রমিকদের নাম ও কার্ড নম্বরের তালিকা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে জমা দেয়া হবে'।
এরই প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
দিগন্ত সোয়েটার কারখানার এক শ্রমিক জানান, গতকাল মালিক পক্ষ পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়। কিন্তু আজ সকালে শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সেকশনে মেশিনের লাইট, মেশিন ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে পান।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে মেশিনপত্র তছনছ করেছে। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সকাল ৮টার দিকে তারা আন্দোলনে নামেন। এসময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে।
এক পর্যায়ে শ্রমিকরা মিছিল সহকারে বের হয়ে পাশ্ববর্তী কোস্ট টু কোস্ট কারখানায় হামলা চালায়। এসময় তারা কারখানার মূল ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে তারা ভবনের কাঁচ, আইটি সেকশনের কম্পিউটার, মেশিনপত্র ভাঙচুর করে এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি বাইরে ফেলে দেয়।
এসময় মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, পিকআপসহ অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় পথচারীসহ অন্তত ১০জন আহত হন। আহতদের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে এবং তাদের সড়ক থেকে হটিয়ে দেয়। শ্রমিকরা আন্দোলন ত্যাগ করলে সকাল ১০ টার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আশেপাশের কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বাসন থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, দিগন্ত সোয়েটার কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের ঝামেলার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।