চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে বিপজ্জনক পণ্য: কমিটি গঠন
চট্টগ্রাম বন্দরের শেডে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে পড়ে থাকা কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক পণ্য সরাতে তৎপর হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর দুটি সংস্থা বন্দর থেকে এসব পণ্য সরিয়ে নিলামে তোলা কিংবা ধ্বংস করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পি শেডে রক্ষিত কেমিক্যাল ও হ্যাজার্ডস মালামালের বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে দেখে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯ আগস্ট একটি কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম শফিউল বারীকে আহবায়ক করে গঠিত ৬ সদস্যের ওই কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা ) জাফর আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমদানিকারকরা সময়মতো পণ্য খালাস না করায় বন্দরে দীর্ঘদিন আটকে আছে ক্যামিকেলসহ হেজাডার্স পণ্য। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব পণ্য নিলামে তুলে বিক্রি কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংস করলে এ ধরনের পরিস্থিতি হতো না।
এদিকে গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের ৩ নম্বর শেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নতুন করে আতঙ্কিত করে তুলেছে বন্দর সংশ্লিষ্টদের। ওই শেড়ে ৩৩ বছর আগে আমদানি করা নিলামের অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন কাপড়, মেশিনারি এবং কেমিক্যাল পণ্য ছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৪ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। ঘটনার পর বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলমকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও বুধবার পর্যন্ত
তারা প্রতিবেদন দিতে পারেননি।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে আমদানিকৃত বিভিন্ন কেমিক্যাল ও হ্যাজার্ডাস পণ্য বন্দরের পি শেডে রাখা হয়। বর্তমানে পি শেডে ১৩ ড্রাম ও ৫৫ 'প্যালেট' পণ্য প্রতিটি কাঠের কাঠামোর ওপর রাখা আছে। এগুলো ১৯৯২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আমদানি হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার নীতিমালা মেনে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো দাহ্য ও বিস্ফোরক তৈরির উপাদান সমুদ্রপথে পরিবহন করতে হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণ এবং দেশে পরিবহনের ক্ষেত্রেও কঠোর নীতি অনুসরনের বিধান রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এসব পণ্য সড়ক পথে পরিবহনে বিধান মানা হয় না বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের পণ্য আমদানি হয়েছে ৩৯৪ মেট্রিক টন। এর আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয় ৫১৮ টন। গত ছয় বছরে ১ হাজার ৭৩৮ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি হয়।
কেমিক্যাল ও হ্যাজার্ডস পণ্যের অবস্থান জানতে গঠিত কমিটির আহবায়ক চট্টগ্রাম বন্দরের এক সদস্য (মেরিন ও হারবার) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিপজ্জনক পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা প্রণীত 'ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস বা আইএমডিজি কোড' রয়েছে। এতে ৯টি ক্যাটাগরির পণ্যের একটি তালিকা রয়েছে। তাতে বিস্ফোরক, বিপজ্জনক গ্যাস, দাহ্য তরল ও কঠিন পদার্থ, বিষাক্ত, তেজস্ক্রিয় ও জারণ পদার্থ অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পণ্য সাধারণত চারদিনের মধ্যে বন্দর থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের পি শেডে খালাস না হওয়া কেমিক্যাল রং সোডা এবং হ্যাজাডার্স পণ্য রয়েছে। কী পরিমাণ পণ্য আছে, তা নিরুপনে কাজ করছে কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বন্দরের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কেমিক্যালসহ অন্যান্য হ্যাজার্ডস পণ্য রাখার আলাদা ব্যবস্থা থাকে। বন্দরের পি শেডে সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা নেই। বৈরুতের দুর্ঘটনার পর পি শেডে রাখা বিপজ্জনক পণ্য নিয়ে আমরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার ফরিদ আল মামুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পি শেডে রাখা বিপজ্জনক পণ্যের তালিকা নিরুপনে কাজ চলছে। এসব পণ্য শিগগিরই নিলামে তোলা হবে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংস করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।