নারী ভোটারের বুথে পুরুষ ভোটার
বেলা সাড়ে ১১ টা। নগরীর ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডের এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র। বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় গোপন কক্ষে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন দুই পুরুষ। অথচ এটি নারী ভোটারদের গোপনকক্ষ!
জেএম সেন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র- পাশাপাশি কেন্দ্র দুটিতে সকাল থেকে ঝামেলা চলছিল দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। এরমধ্যে একজন আওয়ামী সমর্থিত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ বিপ্লব।
বেলা সাড়ে ১১ টায় এয়াকুব আলী দোভাষ উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকতেই দেখা মিলে কোতোয়ালী থানা পুলিশের ওসি নেজামের সাথে। তিনি এসময় সাংবাদিকদের কেন্দ্রে ঢুকতে নিষেধ করেন।
পরে সাংবাদিকরা কেন্দ্রে ঝামেলা হচ্ছে টের পেয়ে ভেতরে ঢুকলে স্কুলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে কয়েকজন লোক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরের প্রার্থী মোহাম্মদ সোলায়মানের কর্মী-সমর্থরা বিদ্রোহী প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এই সময় নারী ভোটারদের বুথে ঢুকে ভোট দিতে দেখা যায় ওই দুই পুরুষকে।
এই বিষয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ বিপ্লব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পুলিশের সহায়তায় সালাউদ্দিনের সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টের বের করে দিয়েছে। এমনকি কয়েকজন এজেন্টকে একটি কক্ষে আটক রাখে। কোনো প্রার্থীর পক্ষে পুলিশ প্রশাসনের এমন ভূমিকাকে 'ন্যাক্কারজনক' বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন বলেন, 'বেলা ১১ টা থেকে জেএম সেন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দুটিতে বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। কোন প্রার্থীর পক্ষ হয়ে কাজ করে নি পুলিশ প্রশাসন। তবে স্কুলের মাঠে প্রচুর লোকজন জড়ো হওয়ায় দুপুর দেড়টার দিকে আমরা তাদের লাঠিচার্জ করে তাড়িয়ে দিয়েছে'।
কেন্দ্র দুটিতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা ভোট স্থগিত থাকে। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সোয়াটের টিম কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার পর পুনরায় ভোট শুরু হয়।
একইভাবে গোপন কক্ষে ঢুকে জোরপূর্বক একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর মোরশেদ আক্তার চৌধুরী। তিনি এই নির্বাচনকে 'প্রহসনের নির্বাচন' আখ্যা দিয়ে নির্বাচন বর্জনের যোষনা দেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি প্রহসনমূলক নাটক মঞ্চস্থ করেছে।
সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লিগের এই কাউন্সিলর বলেন, 'ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাভ নেই। গোপন কক্ষে অন্যজন আপনার সুইচ টিপে দিচ্ছে। আপনি আপনার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না'।
তিনি এই অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। বুধবার নির্বাচনের দিন ফেইসবুক লাইভে এসে তিনি বেলা ১২ টায় এসব ঘোষনা দেন।
তিনি আরো বলেন যে, নির্বাচন কমিশনার তার কাছে ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করেছেন।
'রির্টানিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জমান একটি ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন করছে'।
'প্রশাসন আমাদেরকে কোনভাবে সহযোগিতা করে নাই' বলেও অভিযোগ করেন তিনি।