ভারতের বাণিজ্য বাধা বাংলাদেশের রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে
পাটজাত পণ্যের ওপর ভারতের এন্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ, এডিবল ওয়েল আমদানি বন্ধ করার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী।
মঙ্গলবার 'ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ডিজিটাল কনফারেন্স অন এগ্রিকালচার সেক্টর ফলোড বাই বিটুবি সেশন' শীর্ষক এক আলোচনায় দুদেশের মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ড্রাস্ট্রিজ (সিআইআই) যৌথভাবে এ কনফারেন্সের আয়োজন করে।
টিপু মুনশী বলেন, ভারত পাটজাত পণ্যের ওপর এন্টিডাম্পিং শুল্ক (অতিরিক্ত শুল্ক) আরোপ করেছে। এখন পাটের বীজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে। বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল রপ্তানি করতো। যা ভারত আমদানি বন্ধ করেছে।
তিনি বলেন, 'এসব পদক্ষেপের কারণে আমাদের রফতানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।'
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বক্তারা বলেন, বেসরকারি খাত প্রতিবছর ভারত থেকে কয়েক শত কোটি ডলার পণ্য আনে, যা আরো বৃদ্ধির ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে একসঙ্গে করতে চায় বাংলাদেশ। যৌথ উদ্যোগ, শিল্প বৈচিত্র্যকরণ এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে এই উন্নয়ন সম্ভব। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে যে কোন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
বক্তারা বলেন, পাট, পেয়াজ, সবজি সহ বিভিন্ন হাইব্রীড বীজের তৈরিতে দুটি দেশের যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারেও চাহিদাও মেটানো যাবে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, 'কৃষি খাতের উন্নয়নে ফার্ম মেকানাইশেন, বীজ ডেভেলপমেন্ট, ফুড প্রসেসর ইন্ডাষ্ট্রির ডেভেলপমেন্টের জন্য দুদেশ একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা চাই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের এখানে বিনিয়োগ করুক যাতে বীজ ও পণ্যের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করা যায়।'
তিনি বলেন, 'বিনিয়োগ আসলে দেশে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। যৌথভাবে পণ্যের উন্নয়নে কাজ করলে সেটা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনেও ভুমিকা রাখবে।'
অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারত প্রথমে পেঁয়াজ বন্ধ করেছে। পরবর্তীতে পেঁয়াজের বীজ রপ্তানিও বন্ধ করেছে। বীজ রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে। পাটের বীজে যাতে কোন রেষ্ট্রিকশন না দেয় সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। এসব বিষয়ে আইনগত বাধা না রেখে সুযোগ দিলে দু'দেশই উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে আমরা সহযোগিতা চাই। ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর ৮-৯ হাজার ট্রাক্টর আমদানি করা হয়, যার ৫-৬ হাজারই ভারত থেকে আসে। বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্রপাতির বাতসরিক বাজার প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের যা বছরে ১০% হারে বাড়ছে। এ বিশাল বাজারে ভারত যদি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনিয়োগে করে তবে দুদেশই উপকৃত হবে। বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা স্থাপন ও অ্যাসেম্বল হলে দেশে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে অন্যদিকে কৃষকেরা কম দামে যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ভারত- বাংলাদেশ দুদেশেই ৬০% এর বেশি মানুষ কৃষিতে সম্পৃক্ত। ভারত বাংলাদেশে কৃষিযান্ত্রিকীকরণ, ফুড প্রসেসিং ও ফিস-অ্যাকুয়াকালচার এই তিনটি খাতে অধিক গুরুত্বসহ কৃষির সকল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা করতে আগ্রহী। ফুড প্রসেসিংয়ে একসাথে কাজ করলে বৈশ্বিক প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজারে দুদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেও তিনি আশা করেন।
তিনি বলেন, রেলওয়ের উন্নয়নে ভারত আগে থেকেই কাজ করছে। সেখানে আরো কাজ করার জায়গা রয়েছে। একই সঙ্গে এনার্জি, ট্রান্সপোর্ট সহ বিভিন্ন খাতে ভারত কাজ করতে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার এমডি ও সিইও ড. পবন গোয়েনকা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়ে বলেন, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার জন্য বাংলাদেশ তিন শীর্ষ বাজারের একটি। আমরা এই বাজারকে এক নাম্বার স্থানে উন্নীত করতে চাই।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, দুই দেশেরই মূল ভিত্তি। সুতরাং দুদেশ যৌথভাবে কাজ করলে কৃষি এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে বড় কাজ করার সুযোগ রয়েছে।