মণ্ডপে কোরআন রাখার কথা স্বীকার করেছেন ইকবাল
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার কথা স্বীকার করেছেন ধর্মীয় অবমাননার দায়ে আটক ইকবাল হোসেন। আজ শুক্রবার (২২ অক্টোবর) বিকালে তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার পর হনুমানের মূর্তি থেকে গদা সরিয়ে নেওয়ার কথাও পুলিশকে জানিয়েছেন ইকবাল। তবে কার নির্দেশে এই কাজ করেছেন, তা এখনও জানাননি। গ্রেফতারের পর থেকেই ইকবাল অসংলগ্ন আচরণ করছেন।
৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহমেদ আলমের ছেলে।
এর আগে কক্সবাজারে ইকবালকে আটকের পর, শনাক্ত করতে তার মাকে ডেকে নেয় পুলিশ। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কেউ বিস্তারিত বলেননি।
কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র মণ্ডপে কোরআন রাখতে ইকবালকে কাজে লাগিয়েছে। নানুয়ারদীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপটিই ছিল তাদের লক্ষ্য। তবে ইকবাল যখন মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে সেখানে যান, তখন মণ্ডপ পুরোপুরি জনশূন্য হয়নি।
এজন্য তিনি চলে যান, মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরের গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে। ওই মন্দিরটির গেটের তালা ভাঙতে তিনি একটি লাঠিও জোগাড় করেন। তবে সেটি তালা ভাঙার মতো মজবুত না হওয়ায় ব্যর্থ হন ইকবাল। এরপর আবার নানুয়ারদীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে যান।
কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, আমরা প্রথম থেকে দাবি করছি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে। তার সাথে মূলহোতাদেরও খুঁজে বের করতে হবে।
এদিকে, কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে নেওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। এর আগে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ইকবালকে বহন করা পুলিশের গাড়ি কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে পৌঁছায়।
ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় কুমিল্লায়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় তাকে পুলিশ লাইন্সে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকায় ঘোরাফেরা করার সময় ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি দল আটক করে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহান সরকারের নেতৃত্বে একটি দল তাকে আনতে কক্সবাজার যায়।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে জেলা পুলিশের টিমটি ইকবালকে কুমিল্লায় আনতে রওয়ানা দিয়ে, ভোরে কক্সবাজার পৌঁছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে নিয়ে শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে কুমিল্লার পথে যাত্রা শুরু করে পুলিশের ওই টিম।
নানুয়ারদীঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সেই ইকবালকে ঘটনার পর থেকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ইকবালকে কুমিল্লায় আনা হয়েছে। তাকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা সিসিটিভিতে যাকে শনাক্ত করেছিলাম, এই সেই ইকবাল।
গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা নগরীর নানুয়ারদীঘির পাড়ের একটি অস্থায়ী মণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক হামলা হয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত-বাড়িতে।