মৌলভীবাজারে ‘লাম্পি’ রোগের প্রাদুর্ভাব, আতঙ্কে কৃষক
চলমান করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে মৌলভীবাজারে গবাদি পশুর মধ্যে দেখা দিয়েছে 'লাম্পি' রোগের প্রাদুর্ভাব। এরইমধ্যে জেলাব্যাপী প্রায় ছয় হাজার গরু রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ২০টি।
এখন পর্যন্ত রোগটির কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলেও জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস বলছে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে গরু সুস্থ হয়ে যাবে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের মতে, 'লাম্পি' একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ। রোগটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। এ কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে গরু জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বরের সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা আসে। শরীরের চামড়ায় গুটিবাপি-আকৃতির ক্ষত ধারণ করে এবং লোম উঠতে থাকে। ক্ষতগুলো ক্রমশ মুখ ও পা-সহ শরীরের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় আক্রান্ত গরু মুখে কোনো খাবার নিতে চায় না। এক পর্যায়ে গরুগুলো মারাত্মক দুর্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক বছর ধরে রোগটি এ অঞ্চলে দেখা গেলেও তিন-চার মাস ধরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।
জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পুরো জেলায় এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ১১০টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে কুলাউড়ায় ১০টি, শ্রীমঙ্গলে সাতটি এবং জুড়ীতে তিনটি গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সূত্র আরও জানায়, বড়লেখা উপজেলায় দুই হাজার ১২৬টি, সদর উপজেলায় ৫২১টি, শ্রীমঙ্গলে এক হাজার ৩৬৮টি, রাজনগরে ২২৯টি, কুলাউড়ায় এক হাজার ৩৫২টি, কমলগঞ্জে ২৭৭টি ও জুড়ীতে ২৩৭ টি গরু আক্রান্ত হয়েছে।
রোগটি সর্ম্পকে ধারণা না থাকায় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাগাবলা এলাকার কৃষক আবদুল বাছিত জানান, তার দুটি গরুর মধ্যে একটি এ রোগে আক্রান্ত।
'প্রথমে শরীরে গুটি গুটি কিছু একটা ওঠে। সেই গুটি থেকে পানি জাতীয় কিছু বের হয়, সঙ্গে গরুর লোমও পড়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রাও বেশি থাকে। নাক-মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কোনো চিকিৎসায় কাজ হচ্ছে না। শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরছে', বললেন আবদুল বাছিত।
পশুচিকিৎসকরা বলছেন, মশা, মাছি ও আটালির মাধ্যমে রোগটি খুব সহজে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ইকবাল হাসান জানান, লাম্পি রোগটি মানুষের হয় না। তবে কোনো অসুস্থ পশুর মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একই রোগ মানুষের না হলেও এর কারণে অন্য রোগ হতে পারে।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাছুদার রহমান সরকার জানান, জেলায় লাম্পি রোগে আক্রান্ত অনেক গরু সুস্থ হয়েছে। অন্যদিকে, মৃত পশুগুলো মূলত সঠিক চিকিৎসার অভাবেই মারা গেছে। তাই এই রোগে আক্রান্ত পশুর সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'এ রোগ সম্পর্কে জানাতে আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। মাইকিং করলে জনমতে আতঙ্ক বাড়বে কি না, তা নিয়ে আমরা ভাবছি।'
এর আগে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের কিছু এলাকার রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে লাম্পি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। ১৯২৯ সালে জাম্বিয়ায় প্রথম এ রোগ শনাক্ত হয়। আফ্রিকার দেশগুলোতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। সেখানে রোগটির কারণে একাধিকবার মহামারি হয়েছে।
আফ্রিকায় এ রোগে গড় মৃত্যুর হার শতকরা ৪০ ভাগ। মশা-মাছি এ রোগের প্রধান বাহক বলে জানা গেছে।