ইসলামিক নাম থাকলেই কেউ প্রকৃত মুসলমান হয় না: ডা. জাফরুল্লাহ
কোনো সজ্জন মুসলমান, প্রকৃত মুসলমান কারো বাড়িতে আগুন দিতে পারে না, ইসলামিক নাম থাকলেই মুসলমান হওয়া যায় না- সম্প্রতি নড়াইলের হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে এমনটাই বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, "ইসলামিক নাম থাকলেই আল্লাহর বান্দা হওয়া যায় না। মুসলমান যদি সজ্জন না হয়, তবে সে মানুষেরও অধম।"
রোববার (১৭ জুলাই) বিকেলে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ার সাহাপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি, দোকান ও মন্দির পরিদর্শনকালে তিনি একথা বলেন।
"শুধু সংখ্যালঘু নামের কারণে দরিদ্র মানুষের ওপর অত্যাচার চলছে। আমাদের সবাইকে মিলে দরিদ্রতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। আমাদের স্বপ্নই ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ," বলেন তিনি।
এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।
জোনায়েদ সাকি বলেন, "হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িঘর-দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের নিন্দা জানাই। আমরা মর্মাহত। যারা এ ঘৃণিত ঘটনার সাথে জড়িত তাদের শাস্তির দাবি জানাই।"
"এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটার পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিচারটা দ্রুত হওয়া জরুরি," যোগ করেন তিনি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ বোরহান উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা বনি ও প্রশাসনের সদস্যরাসহ স্থানীয় লোকজন।
আকাশ সাহা নামের এক কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে একটি বিতর্কিত কমেন্ট করার অভিযোগ ওঠে।
ওই কমেন্টের জের ধরে শুক্রবার বিকেলে হামলা হয় দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায়।
হামলাকারীরা গোবিন্দ সাহা ও দিলীপ সাহার বাড়ি, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবা অশোক সাহার দোকানসহ ১০টির বেশি বাড়ি-দোকান ভাঙচুর করে। গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি সাহাপাড়া মন্দিরের প্রতিমা, চেয়ার ও সাউন্ডবক্স ভাঙচুর করে। ফলে ভীতসন্ত্রস্ত হিন্দু পরিবারের অধিকাংশ সদস্য আশপাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। রাত প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে বন্ধ হয় এ তাণ্ডব।
এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিটের পাশাপাশি র্যাবও মোতায়েন করা হয়। ঘটনার পর আকাশ সাহার বাবাকেও হেফাজতে নেয় পুলিশ।
তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে গ্রামের পরিস্থিতি এখন 'স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে'।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আজগর আলী বলেন, "গ্রামে এখন আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিটের সদস্যরা মোতায়েন আছেন।"
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ১৬ জুলাই রাতে দিঘলিয়া গ্রামের সালাহ উদ্দীন কচি বাদী হয়ে আকাশ সাহার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা দায়ের করেছিলেন। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
লোহাগড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাকফুর রহমান বলেন, "আকাশ সাহাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বর্তমানে সে রিমান্ডে আছে।"
এদিকে সাম্প্রদায়িক হামলার এ ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ।
রোববার রাতে লোহাগড়া থানার এসআই মাকরুফ রহমান বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়। তিনি জানান, মামলায় ২০০ থেকে ২৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।