বঙ্গোপসাগরে অর্ধশতাধিক ট্রলার ডুবিতে ১৩ জনের মৃত্যু
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে চরম আবহাওয়ায় গত চার দিনে প্রায় ৫০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে অন্তত ১৩ জেলে নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড জানিয়েছে, এসব ঘটনায় ২০০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম জোনের সূত্র জানায়, রাঙ্গাবালী, হাতিয়া, মনপুরা, নাজিরারটেক, সোনাদিয়া চ্যানেল, হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও সুন্দরবন উপকূলে ৩৮টি ট্রলার ডুবেছে।
অন্যদিকে কুয়াকাটায় ১১টি ট্রলার উল্টে গেছে বলে জানিয়েছে কুয়াকাটা মৎস্য আড়ত সমিতি। তাছাড়া, সুন্দরবন ও এর আশপাশের ভারতীয় অংশের কাকদ্বীপ এলাকায় চারটি ট্রলার উল্টে যায় বলে জানিয়েছে সূত্র।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের (দক্ষিণাঞ্চল) মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কর্নেল কে এম শফিউল কিঞ্জল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গত চার দিনে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে পটুয়াখালী, রাঙ্গাবালি, হাতিয়া ও মনপুরার ১৮ টি ট্রলারের ১৯৫ জন জেলে নিখোঁজ হন।'
'এদের মধ্য থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার করা গেছে, বাকি ১১১ জন এখনো নিখোঁজ আছেন। তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে,' বলেন তিনি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো মাসুম মিয়া বলেন, 'কোস্টগার্ড ১৮ টি ট্রলারের কথা বললেও আমাদের হিসেবে ৪০০ জেলেসহ ৪১টি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। এ কারণে জেলেপল্লীতে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।'
এদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে অন্তত ১৬০ জন জেলেসহ ১১টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩৪ জন জেলে। শুক্রবার দুপুর থেকে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।
গত ১৯ আগস্ট কক্সবাজারের নাজিরারটেক ও মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল, হাতিয়া ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ১৮ টি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড (পূর্বাঞ্চল) এর গোয়েন্দা বিভাগের ইনচার্জ মোহাম্মদ মজনু টিবিএসকে বলেন, 'কক্সবাজারের নাজিরারটেক ও মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে ট্রলারডুবির ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে সাত জেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এছাড়া সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌ ঘাটে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।'
গত ১৯ আগস্ট বিকেলে এফবি মায়ের দোয়া নামের একটি ফিশিং ট্রলার নাজিরারটেক চ্যানেলে ডুবে যায়। এ সময় ওই ট্রলারে থাকা ১৯ জেলের মধ্যে আটজনকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড। অন্য ট্রলারে করে তীরে ফিরে আসে আরও তিন জেলে।
পরদিন বিকেলে মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ও সাইফুল ইসলাম নামে দুই জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা সবাই কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের বাসিন্দা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য জানিয়েছেন কোস্টগার্ড কক্সবাজার স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম।
কক্সবাজার ফিশিং গ্রাউন্ড এলাকায় ঝড়ের কবলে পরে ভোলার ৪টি মাছ ধরা ট্রলার ৬০ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে ডুবে গেছে। এদের মধ্যে ৩০ জনকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও এখনো ৩০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ১৭ আগষ্ট দুপুরে ট্রলার গুলো মাঝি মাল্লা নিয়ে সাগরে যায় বলে জানিয়েছেন লালমোহন উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা তানভির আহমেদ।
এফভি লামিয়া নামের একটি ট্রলারের মালিক হারুন অর রশিদ ফারুক জানান, শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে তার বোটটি হঠাৎ গভীর সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। তিনি তখন আরেকটি ট্রলারে সুন্দরবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
তিনি বলেন, 'আমার দুটি ট্রলারে ১৩ জন মাঝিমাল্লা ছিলো। আট জন জেলেকে উদ্ধার করা গেলেও বাকি পাঁচজনের এখনও কোন সন্ধান মেলেনি।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'জেলা প্রশাসন ও কোস্ট গার্ড নিয়মিত জেলেদের সাগরের নিম্নচাপ সম্পর্কে অবহিত করার জেষ্টা করে। কিন্তু ইলিশের ভরা মৌসূম হওয়ায় তাদের আটকে রাখা যায় না। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জেলেরা সাগরে চলে যান। মূলত সচেতনতার অভাবে এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে।'
এদিকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা খন্দকার মুনিফ তৌকি টিবিএসকে বলেন, '২১ আগষ্ট সুন্দরবরেন আকরাম পয়েন্ট থেকে 'রিভারমেট' নামে একটি ফিশিং ট্রলারের ২১ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই নোয়াখালী রামগতির বাসিন্দা। অন্যদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূল থেকে 'এমভি মায়ের দোয়া' নামে একটি ফিসিং ট্রলারের ২৩ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাসিন্দা।'
এদিকে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের কাকদ্বীপ ও আশপাশের এলাকা থেকে গত ৩৬ ঘণ্টায় মোট ১১৪ জন বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌ-সেনা ও কোস্ট গার্ড।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের (পশ্চিমাঞ্চল) কর্মকর্তা কর্পোরাল সবুজ টিবিএসকে বলেন, 'গত শুক্রবার বঙ্গোপসাগর আচমকা উত্তাল হয়ে ওঠায় তীরে ফেরার সময় পায়নি মৎস্যজীবীরা। এ সময় সুন্দরবন উপকূলে একাধিক বাংলাদেশি ও ভারতীয় জেলেদের ট্রলার ডুবে যায়। নিখোঁজ হন দুই দেশের প্রায় ৩০০ শতাধিক মৎস্যজীবী। এরপর ভারতীয়-বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে দুই দেশের কোস্ট গার্ড।'
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হারুনর রশিদ টিবিএসকে বলেন, 'সাগরে লঘুচাপটি কেটে গেছে। তবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত কোনো সিগনাল নেই।'