মা আত্মগোপনে ছিলেন, রহিমার দেওয়া জবানবন্দি বদলাতে চান মেয়ে মরিয়ম
মা আত্মগোপনে ছিলেন দাবি করে আদালতে রহিমা বেগমের জবানবন্দি বদলাতে চান বলে জানিয়েছেন মেয়ে মরিয়ম মান্নান।
'মায়ের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে মা জীবনের প্রতি বিরক্ত, নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন। এটার জন্য দায়ী আমরাও। আমরা তো তার সন্তান। মা ভিষণ কান্নাকাটি করছে। তিনি বলছেন আমি তো চলেই গেছি, আমাকে কেন নিয়ে এসেছো,' বৃহস্পতিবার বিকেলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন মরিয়ম।
'মায়ের এই স্টেটমেন্ট টা আমরা নিচ্ছি না। আইন আদালত কেউ নিবে না। তার যদি মাথা ঠিক থাকতো তাহলে ছেলে মেয়েদের রেখে এসব করতো না। মায়ের জবানবন্দি আদালতে অবশ্যই পরিবর্তন করাবো। মাকে তো আমরা এখনি আদালতে নিতে পারছিনা। পিবিআই তদন্ত করছে, তারা যখন ডাকবে, তখন আদালতে স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করাবো,' বলেন তিনি।
মাকে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নিয়ে মরিয়ম বলেন, 'আমরা মামলায় কারো নাম দেইনি। সন্দেহভাজনদের নাম দিয়েছিলাম। তাদেরকে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ ছিল। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।'
গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়ার বাড়ি থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন মরিয়ম ও তার ভাই-বোনেরা। পরেরদিন ২৮ আগস্ট দৌলতপুর থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী আক্তার। আসামী করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে, মামলায় কৌশলে জড়িয়ে দেওয়া হয় জমি সংক্রান্ত বিরোধীদের নাম।
সেই মামলায় প্রতিবেশি মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল, হেলাল শরীফসহ রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার কারাগারে রয়েছেন।
পরে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। পরেরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে নিজেকে অপহরণের দাবি করেন জবানবন্দি দেন। সেই সময়ে মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় তাকে মুক্তি দেয় আদালত।
মরিয়ম মান্নান আরও বলেন, 'যদি কেউ বলে মায়ের আত্মগোপনে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম, তাহলে সেটা ভুল। মাকে খুঁজতে গিয়ে যদি কোন দণ্ড হয়, তাহলে তা হাসি মুখেই মেনে নিতে হবে। আমি যদি জানতাম আমার মা নিজে থেকে চলে গেছে, তাহলে কোন আইনি আশ্রয় নিতাম না। নিজেই খুঁজে বেড়াতাম।'
যারা কারাগারে আছেন, তাদের মুক্তির জন্য কিছু করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি ইতোমধ্যে আইনজীবীকে বলে দিয়েছি মামলাটি তুলে নিতে। তখন তাদের প্রতি সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। এখন তো মনে হচ্ছে মা আত্মগোপনে ছিলেন। তাই মামলাটি তুলে নিব। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আদালতের কাছে ক্ষমাও চাইবো।'
দুই স্থান থেকে মায়ের খোঁজ জানানো হয়েছিল
মরিয়ম মান্নান বলেন, 'ময়মনসিংহ থেকে আমরা ঢাকাতে আসার পর, বান্দরবান থেকে মনি বেগম আমার ভাই মিরাজকে ফোন করেছিল। তিনি বলেছিলেন আপনার মা ভিক্ষা করতে করতে আমাদের কাছে এসেছিলেন। বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। নাম্বারটি আমার ভাই র্যাবকে দিয়েছিল তদন্ত করতে।'
'এছাড়া ফরিদপুর থেকেও আমার ভাইয়ের মোবাইলে জানানো হয়েছিল, আপনার মা আমাদের কাছে আছে। তবে মোবাইলটি আমার ভাইয়ের স্ত্রী রিসিভ করে বিরক্ত প্রকাশ করেছিলেন।'
'সেই সময়ে আমাদের মাথা ঠিক ছিল না। একেকজন ফোন করে একেক রকমের কথা বলছিলেন। তাই কোনটা সত্য বুঝে পারছিলাম না,' বলেন তিনি।
খুলনা পিবিআই'র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, 'তদন্তে নেমে প্রায় সকল তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। যে সময় রহিমা আত্মগোপনে যান, সেই সময়ে তার স্বামী বেল্লাল হাওলাদার কাছেই ছিলেন। যে কারণে বেল্লাল হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। তাকে আমরা রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছি।'
৪ অক্টোবর তার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তার পর রহিমার আত্মগোপনে কারা জড়িত জানা যাবে বলে জানান তিনি।