খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ: পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে আসছেন হাজারো নেতাকর্মী
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি।
বেলা ১১ টায় খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির এ গণসমাবেশের প্রাথমিক অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। গতকাল রাত থেকেই সেখানে নেতাকর্মীরা দলে দলে এসে হাজির হন।
খুলনা মহানগর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, "জাতীয় সংগিত পরিবেশনের মাধ্যমে আমরা আজকের সমাবেশের প্রাথমিক কামসূচি শুরু করেছি। এর পরপরই স্থানীয় নেতার বক্তব্য শুরু করবেন।"
দুপুর দুইটার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দিবেন বলে জানান তিনি।
আজ খুলনা বিভাগে গণসমাবেশের জন্য তৈরি মঞ্চে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে দলে দলে আসছেন নেতাকর্মীরা।
শনিবার দুপুর দুইটায় খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক জ্বালানী তেল, চাল, ডাল তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও দেশব্যাপী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ গণসমাবেশ ডাকা হয়েছে।
ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম; নারায়ণগঞ্জে শাওন; মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওনকে গুলি করে হত্যা; যশোরে আব্দুল আলিমকে হত্যার পাশাপাশি সব নেতাকর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদে এ গণসমাবেশ করছে বিএনপি।
খুলনা মহানগর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, "রাত থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা এসে সমাবেশ হাজির হচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমরা মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ করেছি। যথাসময়ে আমাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।"
এদিকে বিএনপির সমাবেশস্থলে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
তবে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মাসুদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, "সমাবেশে জন্য বিএনপিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে।"
পরিবহন ধর্মঘটের বাধা পেরিয়ে আসছেন নেতাকর্মীরা
এর আগে খুলনায় বিএনপি'র বিভাগীয় গণসমাবেশের দিনে আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাতে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন ঘোষণা করে, ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনা থেকে চলাচলকারী সকল গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
শুক্রবার সকালে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালে থাকা সব পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ। বাগেরহাট থেকে খুলনাগামী বাস ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাসই চলছে না।
এমনকি বাস টার্মিনালসহ আশপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে টহল দিতে দেখা যায়। কিন্তু এর মধ্যেও চিকিৎসা, পরীক্ষা, চাকরিসহ নানা কারণের কথা বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করার পর গতকাল শুক্রবার সকালে বন্ধ ঘোষণা করা হয় লঞ্চ চলাচলও। এর ফলে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের টিকিট সংকট দেখা দেয়।
তবে, খুলনায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে গতকালই বিকল্প প্রস্তুতি নেয় সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি। সাতক্ষীরা থেকে ছয় হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবে বলে জানান সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী।
অন্যদিকে, সমাবেশের আগে গণপরিবহন ধর্মঘটের মুখে সব বাধা উপেক্ষা করে ট্রলারে করে ১৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গতকাল খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারী ইউনিয়নে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ট্রলারে করে রওনা দেন তারা।
খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে দুই দিনের বাস ধর্মঘট ও লঞ্চ ধর্মঘটের পর রূপসার মাঝিরাও ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়।
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো, ভৈরব থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদী খনন, ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাসসহ ১০ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে যাত্রীবাহী লঞ্চ শ্রমিকরা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সমাবেশে আসতে বাধা দিতেই বাস ও লঞ্চ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
ওদিকে, পরিবহন ধর্মঘট, পথে পথে তল্লাশিসহ নানান বাধাবিপত্তি ঠেলে গতকালই বাগেরহাট থেকে খুলনায় যাত্রা করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার ভোর থেকে ভ্যান, রিক্সা, ইজিবাইক বা পায়ে হেঁটে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে রওনা হন অনেকে।
তবে পথে পথে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারলে ফিরেও যেতে হয়েছে অনেককে।
এদিকে, খালিশপুর থেকে সমাবেশে আসার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি মিছিলে গুলির অভিযোগ উঠেছে।
তবে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মাসুদুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, "কোথাও গুলিবর্ষণের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি।"