২০২২ সালে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বেড়েছে ৩২%
আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু ৩২ শতাংশ বেড়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) জরিপ অনুযায়ী, পরিবহন ক্ষেত্রে অনিয়ম, নির্বিচারে দাহ্য পদার্থ সঞ্চয়, অপরিকল্পিতভাবে কর্মক্ষেত্র বা ভবন নির্মাণের কারণে গেলো বছর নিহত হয়েছেন ৭১২ জন শ্রমিক।
২০২২ সালের শেষদিন, শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এসআরএস-এর কার্যালয়ে সংবাদপত্রের তথ্য সম্বলিত এই জরিপ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
গত বছর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আলোচিত বিএম ডিপো অগ্নিকাণ্ডে ৫০ জনের মৃত্যুসহ ছোট বড় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
জরিপে প্রাপ্ত কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক, ৩৩৩ জন নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে। এরপরেই রয়েছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি), এই খাতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭০। নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছেন ১০৪ জন, কৃষি খাতে ৬২ জন এবং কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে নিহতের এই সংখ্যা ৪৩ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা, বেপোরোয়া যান চলাচল ও অদক্ষ চালক ইত্যাদি হল পরিবহন দুর্ঘটনার মূল কারণ।
জরিপের তথ্য মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৫৩ জন। তবে, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের সময় মারা যাওয়া শ্রমিকদের এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে মোট ৫৪৭ কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৭১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে বিস্ফোরণ ছিল দ্বিতীয়; চট্টগ্রামের বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডসহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৪ জন শ্রমিক।
এসআরএস জানিয়েছে, কেমিক্যাল সংরক্ষণে অদক্ষতা ও অবহেলা, ভবনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকা, কারখানার ভবনে জরুরি বর্হিগমন পথ না থাকা, বহির্গমন পথ তালাবদ্ধ করে দেওয়া, কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেওয়া, নিরাপত্তার বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া, নিয়মিত অগ্নিনির্বাপন মহড়া না করা ইত্যাদি কারণে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটছে।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন ৬৯ জন, যা মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়া বজ্রপাতে মারা গেছেন ৫৭ জন, মাঁচা বা ওপর থেকে পড়ে ৪৫ জন, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর আঘাতে বা তার নিচে চাপা পড়ে ৩৮ জন, পানিতে ডুবে ২৪ জন, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪ জন।
এছাড়া, পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ ও দেওয়াল ধসে ১৩ জন এবং অন্যান্য কারণে ১ জন নিহত হয়েছেন।