তরুণ ক্রেতাদের আগ্রহের মধ্যেই শেষ হলো দেশের প্রথম গবাদিপশুর মেলা
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো দুই দিনব্যাপী পশুপাখির মেলা। 'ঢাকা ক্যাটল এক্সপো-২০২৩' শিরোনামে মেলাটির আয়োজনে ছিল যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও যুব সমাজকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে উৎসাহিত করার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, "আগামী ২০২৪ সালে দেশের রপ্তানি ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনার মধ্যেও আমরা গত অর্থবছরে ৬১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছি, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।"
শনিবার (৭ জানুয়ারি) 'ঢাকা ক্যাটল এক্সপো-২০২৩'-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি বলেন, "ক্যাটেল ফার্ম শুধুই একটি উদ্যোগ নয়। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান অনেক। এক কোটি পশু কোরবানি হয় বাংলাদেশে। একটা সময় ছিল আমাদের কোরবানির পশুর একটা বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি করতে হতো। এখন কোরবানির সময় দেশের বাইরে থেকে পশু আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে। এতে আমাদের দেশের যুবসমাজের অবদান অনেক।"
তিনি বলেন, "দেশে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যুব উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।"
মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ১৫০ জন খামারী তাদের খামারের সেরা গরু নিয়ে অংশগ্রহণ করেন| মেলাতে দেশের সেরা ১২ জাতের গরু প্রদর্শিত হয়েছে যার মধ্যে ছিল দেশী, নর্থ বেঙ্গল গ্রে, রেড চিটাগাং ক্যাটেল (আরসিসি), মিরকাদিম / মুন্সিগঞ্জ, পাবনা, শাহীওয়াল / সিন্ধি, হলিস্টেন ফ্রিজিয়ান / জার্সি, ব্রাহমান / ক্রস ব্রাহমান, মহিষ / মুররা / নিলিরাভি / জাফরাবাদি / আলবিনো, ভূট্টি / বামন খাসি / ছাগল, ভেড়া / দুম্বা।
ছিল ৩০টি স্টল যেগুলোতে খামার সংশ্লিষ্ট অ্যাগ্রো টুলস কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, গোখাদ্যের কোম্পানি নিজেদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য তুলে ধরে| মেলায় মোট স্টল সংখ্যা ছিল ১৫০টি এবং রেজিস্ট্রেশন বুথ ৮টি।
মেলায় সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন ছিল। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মেলায় অংশগ্রহণকারী খামারীদের মধ্যে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী খামারীদের সনদ প্রদান করেছে। দুই দিনব্যাপী মেলায় মোট চারটি সেশন হয়েছে| প্রতিটি সেশন পরিচালনা করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষকবৃন্দ।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, 'জাতীয়ভাবে এটাই প্রথম ক্যাটল এক্সপো। এটা খামারীদের একটি মিলন মেলা। আমাদের প্রতিবছর এমনভাবে রাজধানীতে মেলা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বিভাগীয় পর্যায়েও আয়োজন হবে।'
নারায়ণগঞ্জের খামার আর কে এগ্রো ফার্মা লিমিটেড মেলায় অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আব্দুল সামাদ বলেন, 'আমরা কোরবানির সময় ৬০০ গরু মোটাতাজা করি। ১৫০ থেকে ১২০০ কেজি ওজন থাকে এগুলোর। দাম হয় ৮০ হাজার টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা। এ মেলার মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। তারা আমাদের সম্পর্কে জানতে পারছে। আমরা অনেক খামারিদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। এর মাধ্যমে একে অপরের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।'
মোহম্মদ মিজানুর রহমান এসেছিলেন মিরপুর এলাকা থেকে। তিনি বলেন, 'আমার খামার করার ইচ্ছে আছে তাই এখানে আসা। অনেক খামারিদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি।'
উত্তরা থেকে তিন বন্ধুকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন মোহম্মদ ফয়সাল। তিনি বলেন, 'মেলায় এসে অনেক ভালো লেগেছে। বিশেষ করে অনেক বড় জাতের গরু একসঙ্গে দেখতে পাওয়া। আমরা তাদের তথ্য নিয়ে রেখেছি। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবো।'
আয়োজকরা জানান, প্রথম দিন প্রায় ছয় হাজার লোক টিকেট কেটে মেলায় প্রবেশ করে। শেষ দিনও এমনই লোক হয়েছে। মেলায় প্রবেশের প্রতিটি টিকেটের দাম ছিল ২০০ টাকা।