সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ছে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ছে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ। আগামীকাল সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি (চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল)-এর ১ নম্বর জেটিতে ভিড়ানো হবে কমন এটলাস নামের কার্গো জাহাজটি।
মেঘনা গ্রুপের আমদানি করা ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি নিয়ে মার্শাল আইল্যান্ডসের পতাকাবাহী ১৯৯.৯৯ মিটার লম্বা এবং ৩২.২৬ মিটার প্রস্থের জাহাজটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে রয়েছে। ব্রাজিলের সন্তোস বন্দর থেকে গত ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায় জাহাজটি।
বন্দরের বার্থিং ক্ষমতা বাড়ানোর এই প্রচেষ্টা কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পাশাপাশি পরিবহন খরচ এবং টার্নঅ্যারাউন্ডের সময়, উভয়ই কমিয়ে আনবে।
বন্দরে বড় জাহাজ ভেড়ানো ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক পরামর্শদাতা এইচআর ওয়ালিংফোর্ড।
২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানোর ফলে আকার ভেদে কন্টেইনার জাহাজের ক্ষেত্রে এক হাজার থেকে এক হাজার একশ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। একইভাবে, বাল্ক কার্গো জাহাজে ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন খোলা পণ্য বেশি পরিবহন করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক বলেন, "২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি নতুন মাইলফলক। এই আকারের জাহাজ প্রবেশের বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানিকে খুব শিগগিরিই সার্কুলার জারি করে জানিয়ে দেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।"
এদিকে, জাহাজের বার্থিং উপলক্ষ্যে ১৬ জানুয়ারি সকালে সিসিটি ১ নম্বর বার্থে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনও উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও বন্দরের সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শিপিং বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, "বন্দর জেটিতে ড্রাফট (গভীরতা) বাড়ানোর ফলে একই সময়ে বিপুল পরিমাণ কন্টেইনার এবং খোলা কার্গো পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে খরচ কমে আসবে। লাভবান হবেন দেশি ব্যবসায়ীরা।"
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা এবং ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ প্রধান জেটিতে ঢোকার সুযোগ পায়। এ ধরনের জাহাজে মাত্র ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ কন্টেইনার বহন করা যায়।
কিন্তু ১০ মিটার গভীরতার জাহাজগুলোর মাধ্যমে বন্দরে ৩ হজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার কন্টেইনার বহন করা সম্ভব হবে। এছাড়া, বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা জাহাজ প্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টিইইউএস বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক কার্গো হ্যান্ডলিং খরচও কমে আসবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর রহমান উল্লেখ করেন, বন্দরের ১৮টি জেটির সবকটিতে বড় জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা থাকবে না।
"নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল এবং চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল ১০ মিটার গভীরতার জাহাজগুলোকে হ্যান্ডেল করতে পারবে। এছাড়া, জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) কিছু জেটিতে এই ধরনের বড় জাহাজ নোঙরের ব্যবস্থা করা হবে," যোগ করেন তিনি।