পোশাকশিল্প বিষয়ক মাস্টার্স কোর্স চালু করছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন
চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডাব্লিউ) পোশাক শ্রমিকরা পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশের টেক্সটাইল খাতে ৪ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত রয়েছেন, এরমধ্যে ৬০ শতাংশ নারী। নারীদের জন্য বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পোশাক খাতের জন্য দক্ষ পেশাদার ও ব্যবস্থাপক তৈরি করতে নতুন প্রোগাম চালু করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়টির দশম সমাবর্তনে এসব তথ্য জানান তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ আরেফিন নগর এলাকায় নির্মাণাধীন মূল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১৯টি দেশের মোট ৪৮৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "কোভিডের সময় সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। সবকিছু স্থবির ছিল। তবে আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে নিয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ভূমির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সরকার সহযোগিতা করছে যেন কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত হয়। এখানকার ডিগ্রিধারীরাও তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখছেন দেশে-বিদেশে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর চেরি ব্লেয়ারের সভাপতিত্বে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক জন এডওয়ার্ড সেক্সটন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল নায়রুপ রাসমুসেন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ, সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মায়ের, ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অধ্যাপক রূপা বিশ্বনাথ প্রমুখ।
সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক জন এডওয়ার্ড সেক্সটন বলেন, "আজকের ডিগ্রিধারীরা অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই পর্যায়ে এসেছেন। আপনাদের অভিনন্দন। বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা ও অসাধারণ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আপনারা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বেন। মানুষের জন্য কাজ করবেন।"
পল নায়রুপ রাসমুসেন গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, "আপনারা রোল মডেল। আপনার পথ দেখাবেন। আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি দমন হয়েছে। মিয়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ এশিয়ার অনেক দেশের প্রতিকূল পরিবেশে থাকা নারীরা এখানে পড়তে আসেন। এখানে এমন গল্প পেয়েছি যে, ১৩-১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে, এরপর পোশাক কারখানায় কাজ করেন এবং পরে এখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ এসে মিলিত হয়েছেন। তারা নতুন পথ তৈরি করেন। আজকের এই সমাবর্তন শেষ নয়। নতুন পথের শুরু এখান থেকে।"
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট এবং ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনও গ্র্যাজুয়েটদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।
সমাবর্তনে ভাইস-চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক বিশ্ববিদ্যালেয়ের গত কয়েক বছরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জানান, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ জন পোশাক শ্রমিক এখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করছেন।
তিনি বলেন, "শুধু গ্র্যাজুয়েশন নয়, শিল্প প্রতিষ্ঠায়ও আমরা গাইড করছি। মোট ৬ জন শিক্ষার্থী নিজে শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে ৩২৮ জন আফগান নারী অধ্যয়নরত আছেন এখানে।"
বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সেনেগাল, শ্রীলংকা, সিরিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে নারী শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসেন।