ব্যয়ে গতি না থাকায় ঢাকার ফাস্ট-ট্র্যাক ট্রানজিট প্রকল্পগুলোর তহবিল কমলো
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাস্তবায়ন কাজে মাত্র ২০ শতাংশেরও কম অগ্রগতি হওয়ায় – ঢাকায় সমন্বিতভাবে দ্রুত রেল পরিবহন সেবাদানের লক্ষ্যে নেওয়া এয়ারপোর্ট - কমলাপুর পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্পসহ পাঁচ প্রকল্পের বরাদ্দ – চলতি বছর ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নের অংশসহ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ পাঁচ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে চার হাজার ১০৫ কোটি টাকা তহবিল কর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়নের এক হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা এবং বিদেশি অর্থায়নের অংশ দুই হাজার ৫২১ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।
বাস্তবায়ন কাজে ধীর গতি এবং তার ফলে বাজেট হ্রাসের কারণ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, দরপত্র আহ্বানে সমস্যা এবং ঢাকার গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ইউটিলিটি লাইনের জটপাকানো দশাকে দায়ী করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা– ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
তবে সড়ক পরিবহন ও জনপথ বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক এই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ হ্রাসের প্রস্তাবকে 'হতাশাজনক' উল্লেখ করে এজন্য ডিএমটিসিএল এর 'অদক্ষতাকে' দায়ী করেছে। কমিটির সভা বিবরণী অনুসারে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে এমআরটি লাইন-১ এর ভৌত কাজ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হবে। এমআরটি লাইন-১–এর দুটি পথ। প্রথমটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত। এটি পুরোপুরি পাতালপথে হবে। দ্বিতীয় পথটি নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত, যা হবে উড়াল পথে।
পূর্বাচলে এমআরটি-১ এর ডিপোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম পাতাল রেলপথের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন।
২০১৯ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
কিন্তু, অনুমোদনের তিন বছর পর ভৌত কাঠামোর কাজ শুরু করার আগেই ডিএমটিসিএল এক হাজার ৭৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেছে। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দুই হাজার ২৭৬ কোটি টাকা মোট বরাদ্দের প্রায় ৭৯ শতাংশ। কাজের ধীরগতির কারণে চলতি অর্থবছরে এমআরটি-১ এর বাজেট ৪৮৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি।
বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অগ্রাধিকার প্রকল্পের ধীরগতিতে বাস্তবায়ন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মূল বরাদ্দ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
তহবিল সংকটে সরকারের প্রকল্প অগ্রাধিকার পুনঃনির্ধারণের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, এই সংকটের মধ্যেও মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাস্তবায়নে 'অদক্ষতা'র জন্যই বরাদ্দ কর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সভায় যাকে 'হতাশাজনক' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বরাদ্দের সাথে সঙ্গতি রাখতে, ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষকে আগামী অর্থবছরে কাজের গতি বাড়ানোর আহ্বানও জানানো হয় বৈঠকে।
এমআরটি-১ প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, 'চলতি অর্থবছরে বিমানবন্দর থেকে রামপুরা পর্যন্ত প্রধান লাইন নির্মাণে আমাদের তিনটি কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, তা করতে না পারায় আমরা বরাদ্দ ফেরত দিচ্ছি'।
মূল নকশা ও বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন এবং ভূমি অধিগ্রহণের মতো প্রস্তুতিমূলক কাজে মহামারির কারণে এই দেরি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)সহ বিদেশি অর্থায়নকারীরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেও কালক্ষেপণ করেছে বলে জানান আবুল কাশেম।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ এক মাসের মধ্যে জানানোর কথা ছিল জাইকার। কিন্তু, তারা এজন্য পাঁচ মাস সময় নিয়েছে'।
২০১৯ সালের অক্টোবরে এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) প্রকল্প ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের অনুমোদন দেয় একনেক। এটি হবে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর-১, ১০, ১৮ নম্বর, বনানী, গুলশান-২ এবং নতুনবাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত।
২০২২-২৩ অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে; তবে সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটে প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ তা ৪৯.২৬ শতাংশ কমিয়ে ৪০৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে চান।
এমআরটি-৫ প্রকল্পের পরিচালক আফতাব হোসেন খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, আগামী মাসগুলোতে বড় কোনো পেমেন্ট না থাকায় তারা অর্থ ফেরতের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বর্তমানে নকশা স্তরে রয়েছে, এবং ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণও করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ভূমি উন্নয়নের জন্য আরও টাকার দরকার হবে।
'আমরা আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই বা আগস্টে ডিপো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তখন আমরা বরাদ্দের সাথে সঙ্গতি রাখতে পারব'।
গত বছরের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এর একটি অংশ উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যেই মতিঝিল পর্যন্ত রেল সেবা চালু করতে দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ চলছে বলে দাবি করেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। তারপরও এই প্রকল্প চলতি অর্থবছরের মোট চার হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে প্রায় এক হাজার ৯১৪ কোটি টাকা ফেরত দিতে চলেছে।
এবিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রকল্প পরিচালক আফতাবউদ্দিন তালুকদারের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।