বিএনপির পদযাত্রায় হামলা, গ্রেপ্তার ও পুলিশি বাধার অভিযোগ
হামলা, গ্রেপ্তার ও পুলিশি বাধার মধ্য দিয়ে পালিত হল সারাদেশে মহানগর, থানায় থানায় বিএনপির বিক্ষোভ পদযাত্রা।
রাজধানী ঢাকার ৫০টি থানায়ও একযোগে এ পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রাজধানীর তুরাগ থানা বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের হামলায় ৬ জন বিএনপি নেতাকর্মীর আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তেজগাঁ শিল্পাঞ্চল থানার মিছিলের আগে সাবেক যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরবকে পুলিশের গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মোস্তাফা জামানের বাসায় সরকারদলীয় লোকজনের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির পদযাত্রায় গ্রেপ্তার, বাধা ও পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো, দমনপীড়ন বন্ধ, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে সারাদেশে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এদিকে, আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। তারাও ঢাকার প্রতিটি থানায় বিক্ষোভ মিছিল এবং ছয়টি স্থানে শান্তি সমাবেশ করেছে।
একই দাবিতে আগামী ১১ মার্চ (শনিবার) সারা দেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি একই দিনে গণতন্ত্র মঞ্চ, সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোটসহ চলমান যুগপৎ আন্দোলনে মিত্রদলগুলোও কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির পদযাত্রার আগে এক সমাবেশে আগামী ১১ মার্চ দেশের সব মহানগর ও জেলায় যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি 'মানববন্ধন' ঘোষণা করে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'কাঁটাছেড়া সাজানো সংবিধানে আওয়ামী লীগের তামাশার নির্বাচন বিএনপি হতে দেবে না।' তিনি বলেন, 'সরকারের মন্ত্রীরা বলেন বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান কাঁটাছেড়া করে একটি পাতানো নির্বাচনের জন্য সাজিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ? যে নির্বাচনে ভোট দিতে যায় না মানুষ। আবারও পাতানো-সাজানো নির্বাচনের আয়োজন চলছে।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এবার তামাশার নির্বাচন, আওয়ামী লীগের নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এজন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন হচ্ছে।' চলমান এই আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, '১৫ বছর ধরে আন্দোলনে আছি। আমরা আন্দোলনে থাকব। বাধা দিলে আমরা তা অতিক্রম করে যাব।'
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবির সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। নতুন কর্মসূচি হচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনের দশম কর্মসূচি। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গণমিছিল, গণঅবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধীরা।
বর্তমান সরকার দেশের মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারছে না বলে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, 'কয়েক মাসে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এজন্য কলকারখানা চালু রাখতে সমস্যা হচ্ছে।'
শনিবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ডেমরা রোডে যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির পদযাত্রার আগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'এই সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে কেন? কারণ তারা জানে যদি জনগণ ভোট দিতে পারে তাহলে তাদের টেনে গদি থেকে নামিয়ে দেবে। তাই তারা ২০১৮ সালের নির্বাচন দিনের ভোট রাতে করেছে। তারা জানে জনগণ যদি দিনে ভোট দিতে পারে তাহলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।'
তিনি বলেন, 'এই অবৈধ সরকার ও তার নেতাকর্মীরা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেছে। মধ্যবিত্ত গরিব হয়ে গেছে, গরিব আরও গরিব হয়েছে। তারা দুই বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারে না। অতএব এই সরকার জনগণের সরকার না। জনগণের সরকার না বলেই তারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারবে না। এ সরকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এই অর্থনীতিকে তারা মেরামত করতে পারবে না।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ বলে- বিএনপি নির্বাচনে না এলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, আসলে বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগই অস্তিত্ব সংকট পড়বে।'
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পদযাত্রার আগে সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, 'এই সরকার অর্থপাচার করছে, দুর্নীতি করেছে, নানাভাবে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আজ বাংলাদেশে সবকিছুর দাম বেড়েছে। যখন আমরা কোনো দাবি করি, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বন্দুকের গুলি বের হয়।'
গত ২৩ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপত আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গত আড়াই মাসে তারা সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করে।