সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান একাধিক বিএনপি নেতা
বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদীয় নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ কোন ধরণের নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগকে একদম ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চান না স্থানীয় অনেক নেতা, তাই কারো কারো মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার তোড়জোরও দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, কেউ কেউ হয়তো উকিল আব্দুর সাত্তারের মতো সরকারের প্রভাবপুষ্ট হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারে, সরকারের কিছু এজেন্সি এ নিয়ে অনেক আগ থেকেই কাজ করছে- যা বিএনপির আগে থেকেই অনুমানে ছিল। এসব কিছূ মাথায় রেখেই নির্বাচনে যাচ্ছে না দলটি, কারণ বিএনপি এখন সরকার পতনের আন্দোলনে আছে, এই অবস্থায় দলীয় প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী– যেভাবে হোক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আন্দোলনে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে কিছুটা দুর্বল করে তুলবে।
তবে আরেকটি দলীয় সূত্র জানায়, এবার সিটি নির্বাচনে কৌশলী হতে পারে বিএনপি। দলের একটি অংশ চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটিতে স্বতন্ত্র দিয়ে সরকারকে চাপে রাখতে, যেখানে সরকার কারচুপি করে নির্বাচন করলেও তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচনের দাবি আরো জোরালো হবে, আর নির্বাচনে জিতলে দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হবে, তারা আন্দোলনে আরো সক্রিয় হবে। এছাড়াও নতুন নির্বাচন কমিশনের 'টেস্ট কেস' হিসেবে নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে যাওয়া উচিত, কারণ ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারলে দেশে-বিদেশে সরকার আরো বেশি বিতর্কিত হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি দেশে-বিদেশে আরো জোরালো হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে স্থানীয় সরকার বা জাতীয় নির্বাচন- কোন ধরণের নির্বাচনেই অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ কথা একদম পরিষ্কার, এটা ইতোমধ্যে দলীয়ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে গেলে দলীয়ভাবে কী সিদ্ধান্ত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত সকলকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এর বাহিরে কিছু নাই, এর ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, এমনও হতে পারে কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিয়ে দেয়া হবে, যা অনেকটা পারস্পারিক সমঝোতার মাধ্যমেই হবে। তবে নির্বাচনে করতে তেমন বাধা দেয়া হবে না, দলীয়ভাবে নির্বাচনের মাঠে সহযোগিতা না করা হলেও স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীদের সমর্থন পেতে বাধা দেয়া হবে না।
সিলেট সিটি
সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবারও প্রার্থী হবেন কী না তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না। বরং আরিফের বিভিন্ন বক্তব্যে এ নিয়ে আরো রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সফরে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ইঙ্গিত দেন আরিফ। তবে শনিবার যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া আরিফের বক্তব্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আভাস মিলেছে।
বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আরিফুল হক নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হতে পারেন বলে আরিফের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনও জানিয়েছেন। এমন আলোচনা-গুঞ্জনের মধ্যেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার একদিন আগে ১ এপ্রিল হঠাৎ করেই লন্ডন সফরে যান আরিফ।
এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরীর টিবিএসকে বলেন, "দল নির্বাচনে না গেলেও সিলেটের জনগণ চাচ্ছেন আমি যেনো প্রার্থী হই। আবার ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হবে কী না এ নিয়েও তাদের শঙ্কা আছে। এসব বিষয়ে দল এবং সিলেটের নাগরিক সবার সাথে আলোচনা করে আমি দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নেবো। আশা করছি ঈদের পরই আবার সিদ্ধান্ত সবাইকে জানাতে পারবো।"
খুলনা সিটি
বিগত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও দলের সাবেক মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু টিবিএসকে বলেন, "আমি এখন পর্যন্ত দলীয় সিগনালের অপেক্ষায় আছি, এখনো কোন সিগনাল পাইনি। তবে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত।"
আওয়ামী লীগকে খালি মাঠ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী সিটি
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়র ছিলেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আগামী সিটি নির্বাচনে সম্পর্কে বুলবুল বলেন, "আমাদের প্রধান দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও খালেদা জিয়া ম্যাডামের মুক্তি। ম্যাডামকে মুক্ত না করে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে আমি স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচন করবো না। বিএনপি থেকে কেউ স্বতন্ত্রভাবে করবে কিনা সেটাও আমার জানা নেই। আমি মনে করি এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।"
বরিশাল সিটি
এদিকে বরিশালে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিদলীয় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন। তিনি কোনো দলীয় পদে নেই।
গাজীপুর সিটি
আগামী সিটি নির্বাচন সম্পর্কে বিগত নির্বাচনের প্রার্থী বিএনপি নেতা হাসান সরকার বলেন, "খালি মাঠে গোল দিতে দেব না আওয়ামী লীগকে। দল নির্বাচনে গেলে আমি নির্বাচন করবো, আর যদি দল নির্বাচনে না যায় তাহলে আমার ভাজিতা এবং বিএনপি নেতা নূরুল ইসলামের ছেলে শাহ নূর ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবে।"
শাহ নূর ইসলামের দলীয় কোনো পদে নেই।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।