কমলাপুর স্টেশন: স্মার্টফোন ও প্রযুক্তিজ্ঞান না থাকা মানুষদের জন্য অধরা টিকিট
দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের মহানগঞ্জ এক্সপ্রেস-এর স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে সকাল ৯টা ৩৫-এ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান রাকিব ও মিজান।
নেত্রকোনার আমতলী ইউনিয়নে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে টিকিট কিনতে এসেছেন তারা।
অনলাইনে রেলের টিকিট বিক্রি অনেকের জন্য আশীর্বাদ হলেও এ দুইজনের জন্য তা যেন হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পুরোনো পদ্ধতিতে টিকিট কাটাই তাদের সমস্যার সমাধান হিসেবে ভেবেছিলেন তারা।
'আমরা পাথরশ্রমিক। স্মার্টফোন কেনার টাকা নেই আমাদের, ইন্টারনেট ব্যবহারের ধারণাও নেই। অনলাইন টিকিট নিয়ে আমরা তেমন কিছুই জানি না,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন রাকিব।
কিন্তু সরাসরি টিকিট কেনার চেষ্টা করতে গিয়েও হতাশ হতে হলো তাদেরকে।
নিজেদের নির্দিষ্ট ট্রেনের টিকিট কিনতে না পেরে তারা দুইজন জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ও ময়মনসিংহগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের টিকিটও কিনতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এ দুই ট্রেনের টিকিটও মিলল না।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) কমলাপুর রেলস্টেশনে রাকিব ও মিজানের মতো দুরবস্থায় পড়েছিলেন আরও অনেকেই। টিকিট কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েন তারা।
টিকিটের কালোবাজারি ঠেকাতে এ বছরের ঈদযাত্রার সকল টিকিট রেল মন্ত্রণালয় অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের সুবিধার ফলে অনেককেই এ বছর আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়নি। কিন্তু যাদের স্মার্টফোন নেই বা যারা টিকিট কাটার ওয়েবসাইটটি ঠিকমতো ব্যবহার করতে জানেন না, তারা পড়েছেন অকূলপাথারে।
গত ১০ এপ্রিল যারা অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কিনতে পেরেছিলেন, কেবল তারাই আজকে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারছেন।
তবে কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ট্রেনের শোভন শ্রেণির ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেও, অনেকে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট কিনতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেনার জন্য প্রায় দেড় হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার জানান, প্রতি ট্রেনে প্রায় ২০০টি স্ট্যান্ডিং টিকিটের বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ২,০০০টির।
এ কারণে অনেককেই টিকিট ছাড়াই ফিরতে হয়েছে স্টেশন থেকে।
মাসুদ সারওয়ার জানান, ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে কমলাপুর স্টেশন দিয়ে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।