মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাসের বিল ৪৭% বাড়াতে চায় তিতাস
কিছুদিনের মধ্যেই দেশের ২৫ লাখেরও বেশি মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীর মাসিক বিল বাড়তে পারে উল্লেখযোগ্য হারে। রাষ্ট্র-চালিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ধারণা, গ্রাহকরা অনুমানের চেয়েও বেশি গ্যাস ব্যবহার করেন।
মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা তাদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ৩৯%-৪৭% অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করেন বলে দাবি করেছে তিতাস। ব্যবহারকারীদের মাসিক বিল বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে তারা।
বর্তমানে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড একটি সিঙ্গেল বার্নারের জন্য মাসিক ৯৯০ টাকা এবং একটি ডাবল বার্নারের জন্য ১,০৮০ টাকা চার্জ করে।
সিঙ্গেল বার্নার এবং ডাবল বার্নারের ব্যবহারকারীরা প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা হারে যথাক্রমে ৫৫ ইউনিট (ঘন মিটার) এবং ৬০ ইউনিট গ্যাসের জন্য বিল পরিশোধ করে।
তিতাস বিল বাড়ানোর যে প্রস্তাব করেছে তা গৃহীত হলে সিঙ্গেল বার্নার ও একটি ডাবল বার্নারের মাসিক বিল হবে যথাক্রমে ১,৩৭৯ টাকা এবং ১,৫৯১ টাকা।
এদিকে কিছুদিন আগেই চার শ্রেণীর ভোক্তার জন্য গ্যাসের শুল্ক রেকর্ড হারে বাড়ানো হয়। ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং রাজস্ব ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে জানুয়ারিতে চার শ্রেণীর ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের দাম ১৭৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার।
সেসময় আবাসিক, সিএনজি, সার এবং চা বাগানের ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।
পেট্রোবাংলার একটি সূত্রমতে, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের দাবি করে দাম বাড়িয়ে নিজেদের রাজস্ব বাড়াতে চায় তিতাস।
বিইআরসি'র চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বলেন, তারা তিতাস গ্যাসের কাছ থেকে একটি প্রস্তাবনা পেয়েছেন। মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের জন্য অনুমোদিত গ্যাসের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়েছে সে প্রস্তাবনায়।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা আমাদের কমিশন সভায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করবো এবং এর যৌক্তিকতা পরীক্ষা করব।"
বর্তমানে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিতাস গ্যাসের মোট ২৮.৫৭ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে।
তাদের মধ্যে, ২৫.২৫ লক্ষ মিটারবিহীন ও ৩.৩২ লক্ষ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার কভারেজের আওতায় রয়েছে।
একটি সিঙ্গেল বার্নারের জন্য ৫৫ ইউনিট এবং একটি ডাবল বার্নারের জন্য ৬০ ইউনিটের মাসিক গড় ব্যবহারের ভিত্তিতে মিটারবিহীন ব্যবহারকারীদের বিল নির্ধারণ করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। প্রি-পেইড গ্রাহকরা প্রতি ঘনমিটার ১৮ টাকা হারে গ্যাস ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে বিল পরিশোধ করে।
প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীরা জানান, ১,০৮০ টাকার গ্যাস রিচার্জে পাঁচজনের একটি পরিবার সহজেই দেড় মাস চলতে পারে।
তিতাস গ্যাস তাদের প্রস্তাবে দাবি করেছে, মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাসের গ্রাহকরা কেবল গৃহস্থালির রান্নার জন্য নয়, পানি ফুটানোর কাজেও গ্যাস ব্যবহার করেন।
এছাড়া শিল্প এলাকার শ্রমিকরা এবং যারা সাবলেটে ভাড়া থাকে তারা অন্যান্য পরিবারের তুলনায় গড়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার করে থাকে।
গ্যাস রেগুলেশন কমিশনের কাছে তিতাস প্রস্তাব করেছে, মিটারবিহীন আবাসিক ব্যবহারকারীদের জন্য সিঙ্গেল বার্নারের পরিমাণ ৫৫ ইউনিট থেকে বাড়িয়ে ৭৬.৬৫ ইউনিট এবং ডাবল বার্নারের বেলায় ৬০ ইউনিট থেকে বাড়িয়ে ৮৮.৪৪ ইউনিট করা উচিত।
তিতাস তার প্রস্তাবে আরো উল্লেখ করেছে, ২০২২ সালের শুল্ক আদেশে গ্যাসের পরিমাণ হ্রাসের কারণে কোম্পানির সিস্টেম লস বেড়েছে এবং তারা লাভজনক সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও এখন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেছেন, রেগুলেটরি কমিশন মিটারবিহীন গ্রাহকদের জন্য গড় গ্যাসের পরিমাণ যতটুকু নির্ধারণ করেছে, বাস্তবে অনেক গ্রাহক সে পরিমাণে গ্যাস ব্যবহার করেন না।
"মিটারবিহীন ব্যবহারকারীদের জন্য তিতাস গ্যাস যে হিসাব দেখিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কোম্পানিটি দুর্নীতির জন্য গ্রাহকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং তা রেগুলেটরি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনও জানে," বলেন তিনি।
এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বর্তমানে গ্যাসের জন্য গ্রাহকরা যে পরিমাণে বিল পরিশোধ করে তা তাদের প্রকৃত ব্যবহারের চেয়েও বেশি। রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি দেখেছে, সিঙ্গেল বার্নার ব্যবহারকারী মাসে গ্যাস ব্যবহার করে ৪৫ ইউনিটের; ডাবল বার্নার ব্যবহারকারীর বেলায় তা ৫০ ইউনিট।
"আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মিটারবিহীন ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যবহারের তুলনায় বেশি বিল দিচ্ছে। এ অবস্থায় আবাসিক ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও বৈধ কারণ নাও থাকতে পারে," যোগ করেন তিনি।