বুভুক্ষু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আসছে কয়লার চালান
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার সুবাদে সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কয়লার চালান পেতে শুরু করেছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এর ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি সংকট কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ডলারের চাপ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগের চুক্তি থেকে কয়লা সরবরাহ পেতে শুরু করেছে। যেমন শনিবারই ইন্দোনেশিয়া থেকে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ২৬,৬২০ মেট্রিক টন কয়লার একটি চালান মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে কয়লা সংকটের কারণে একের পর এক দুটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়া পায়রা ১,৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটিও নতুন ঋণপত্রের আওতায় ২৫ জুনের মধ্যে কয়লার চালান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখনও পরীক্ষামূলক উৎপাদন পর্যায়ে থাকা অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, কারণ ওই কেন্দ্রগুলোর প্রি-কমিশনিংয়ের কয়লাও আসছে।
গত সপ্তাহের শেষে ঢাকায় কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাতের কারণে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, দেশের অন্যান্য জেলা ও গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিং হয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংও হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়া ও লোডশেডিং পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ৪ জুন দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, কয়লা ও গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহ 'কেবল অল্প সময়ের জন্য'।
২৬ জুনের মধ্যে ফের উৎপাদন শুরু করবে পায়রা
ডলার সংকটে আমদানি বিল দিতে না পারায় সৃষ্ট কয়লার ঘাটতির কারণে ৫ জুন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র পায়রা ১,৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।
উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট দৈনিক প্রতিঘণ্টায় প্রায় ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন।
তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এপ্রিলে নতুন ঋণপত্র খুলতে না পারায় এবং আগের আমদানি বিলটি পরিশোধ করতে না পারায় কেন্দ্রটিকে গত ২৫ মে একটি ইউনিটে এবং ৫ জুন দ্বিতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক ও পরিচালন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা বলেছেন, তারা ২৫ জুনের মধ্যে ৩৭,০০০ মেট্রিক টন কয়লার একটি চালান পাওয়ার আশা করছেন।
তিনি বলেন, 'আশা করছি ২৬ জুন থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফের উৎপাদন শুরু করবে। আর শিপমেন্ট শিডিউল অনুসারে আমরা পরের মাসেও উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারব।'
রামপালে নিয়মিত উৎপাদন চলবে
প্রচণ্ড গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা যখন ক্রমেই বাড়ছিল. তখন রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ম ইউনিট কয়লা সংকটের কারণে গত জানুয়ারি ও এপ্রিলে দুইবার বন্ধ হয়েছিল।
এখন ন্যূনতম পরিমাণ কয়লা থাকায় ও সামনে আরও কয়লা আসার কারণে কেন্দ্রটি উৎপাদন চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
শনিবার (১০ জুন) সকালে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ২৬,৬২০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে একটি জাহাজ।
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আনোয়ারুল আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বর্তমানে কেন্দ্রটিতে প্রায় ৪৬,০০০ মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে।
'এছাড়া আরও ৪৮,০০০ মেট্রিক টন কয়লার জন্য এলসি খোলা হয়েছে যা পরে আসবে,' বলেন তিনি।
বর্তমানে কেন্দ্রটি প্রতিদিন প্রায় ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৈনিক কয়লার চাহিদা প্রায় ৩,০০০ মেট্রিক টন বলে জানান আনোয়ারুল আজিম।
১৮ জুন ফের চালু হবে এসএস পাওয়ার
ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়ে ১,০০০ মেগাওয়াটের বেশি হয়েছে — এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক কোম্পানিটির দ্বিতীয় ইউনিটের ট্রায়াল রানের ৩০০ মেগাওয়াট রয়েছে। তবে কয়লার সংকটের কারণে স্থানীয় এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক ১,৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রি-কমিশনিং টেস্ট উৎপাদনের সময় বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বন্ধ হওয়ার আগে বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভিত্তিতে জাতীয় গ্রিডে ৩০০ থেকে ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল।
এসএস পাওয়ারের সাইট প্রজেক্ট ম্যানেজার ও ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. ফয়জুর রহমান বলেছেন, ১৮ জুনের মধ্যে কয়লার একটি চালান পাওয়ার আশা করছেন তারা। কাজেই তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফের উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হবে।
উপরোক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ছাড়াও বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিইপিসিএল)-এর মালিকানাধীন বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রও পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।