মারা গেছেন যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বিএসএমএমইউ-এর হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান গণমাধ্যমকে সাঈদীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর এ নেতা।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আমৃত্যু কারাদণ্ডভোগের সময় সাঈদী রোববার দুপুর ২টার দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করেন।
এরপর কাশিমপুর কারাগারের চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকার শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান।
পরে তাকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে নিয়ে যেতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সাঈদীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিএসএমএমইউ-এর প্রধান ফটকের সামনে লোকজন ভিড় করতে শুরু করে। তাদের কেউ কেউ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন।
অনেকে সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সংবাদদাতা রাত সাড়ে নয়টার দিকে জানিয়েছেন।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পিরোজপুর-১ বরিশাল আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাঈদী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হন। একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশটির মধ্যে আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে পরবর্তীসময়ে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রদান করেন।
সাঈদীর অপরাধের মধ্যে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে গোপন তথ্য দেওয়া, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং লুট।
'চাঁদে সাঈদীর মুখ' গুজবে সহিংসতা
রায়ের পরে জামায়াত বিক্ষোভ ডাকে। ওই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন।
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরে জামাত-শিবির পরিচালিত বাঁশেরকেল্লা নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে চাঁদের ওপর সাঈদীর মুখমণ্ডল বসানো একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। এ ছবিকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় ধাপে সহিংসতা শুরু হয়।
অনেকের কাছে এ ঘটনা ছিল সাঈদীকে যেকোনো মূল্যে মুক্ত করার ইঙ্গিত। ছবিটি জামায়াতের কর্মীরা মোবাইলফোন ও কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না, তাদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় মসজিদ থেকে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
সাঈদীকে চাঁদে দেখার এ গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর ২০১৩ সালের ৩ মার্চ রাতে বগুড়া জেলাজুড়ে একযোগে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। হামলা হয় বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি, উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসভবন, সরকারি দপ্তর ও রেলস্টেশনে। ১৪৪ ধারা ভেঙে এসব হামলা ও নাশকতা-সহিংসতার সময় গুলিতে নিহত হন ১৮ জন।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে উচ্চ আদালত তার সাজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত করেন।
কিন্তু পরে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীকে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড দেন।