রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও বিলম্ব পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে: বাংলাদেশ সরকার
বাংলাদেশ সরকার বলেছে, নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা কমে আসায় প্রতি বছর শিবিরের অভ্যন্তরে জন্ম নেওয়া প্রায় ৩০ হাজার নবজাতকের জন্য সংকট আরও জটিল হয়ে আসছে।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরও বিলম্ব এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতি পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান চালিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কোনো সমাধান ছাড়াই সপ্তম বছরে পা দিয়েছে রোহিঙ্গা সংকট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে এত দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেওয়ার আর্থ-সামাজিক, জনসংখ্যাগত এবং পরিবেশগত ব্যয় বাংলাদেশকে শেষ সীমার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিরাপদ এবং টেকসই পদ্ধতিতে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং অধিকার রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'তাদের জন্মস্থান মিয়ানমারে এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব।'
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে পারবে না বলে স্বীকার করে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বলেছে, পুনর্বাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
মার্কিন দূতাবাস বলেছে, 'আমরা অন্যান্য দেশের উদারতার প্রশংসা করি যারা এই আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রচেষ্টায় যোগ দিচ্ছে। আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার বাইরে থাকা দেশগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে 'সাদরে গ্রহণ করেছে'।
মার্কিন দূতাবাস বলেছে, 'যেহেতু এই সংকট সপ্তম বছরে পদার্পণ করছে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্পের অন্বেষণে অবিচল থাকি।'
২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ এবং হত্যার নৃশংস অভিযানের ছয় বছর পার হলো।
সরকারের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের ফলে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
মার্কিন দূতাবাস বলেছে, 'প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুকে নিজ দেশে আশ্রয় দেওয়ায় আমরা বাংলাদেশের জনগণের উদারতা এবং আতিথেয়তার প্রশংসা করি।'
এর প্রতিক্রিয়ায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে তাদের প্রচেষ্টায় সমর্থন করেছে।
আমেরিকান জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চল জুড়ে উদ্ভূত মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা করেছে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে সহায়তা করার জন্য দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘকাল থেকে ভুগতে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন সরকার বলেছে, তারা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার, তাদের পরিবারকে শান্তিতে লালন-পালন করার এবং অর্থবহ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপন করার সুযোগ পাওয়ার যোগ্য।
মার্কিন সরকার আরো বলেছে, তারা নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক চাপ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এই নৃশংসতার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান, নির্যাতনের শিকার মানুষদের জন্য ন্যায়বিচার এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্কিন সরকার বলেছে, 'মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম রোহিঙ্গাদেরকে মানবিক সহায়তা প্রদান চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, 'আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তাকারী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও বলেছে, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকট যেমন সীমিত সম্পদ দিয়ে মোকাবিলা করে, তেমনি রোহিঙ্গারা কীভাবে তাদের স্বাগতিক সম্প্রদায় এবং তাদের নিজের পরিবারের অর্থনৈতিক কল্যাণে অবদান রাখতে পারে তা চিহ্নিত করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।