যমুনা রেল সেতু: পূর্ব অংশের কাজ এগোলেও পশ্চিমাংশে অগ্রগতি নেই
দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে সংযোগ বাড়াতে যমুনা নদীর ওপর ২০২৪ সালের আগস্টে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর বাস্তবায়ন কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুসারে, সেতুর পূর্ব অংশের কাজ এগিয়ে থাকলেও অপর অংশের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে না। এ অবস্থায় যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা রেল সেতুর মূল নির্মাণকাজ দুটি প্যাকেজে ভাগ করে দুটি জাপানি ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পশ্চিমাংশের ২৩ পায়ারের মধ্যে শুধুমাত্র ৪টির কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। ২৩টি সুপারস্ট্রাকচার স্থাপনের কাজের মধ্যে মাত্র তিনটি স্প্যানের সুপারস্ট্রাকচার স্থাপন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইস্টার্ন পার্ট বা পূর্বাংশে ২৭টি পায়ার নির্মাণ করা হবে। এ অংশে পাইলিংসহ ২৭টি পায়ারেরই নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে ২৬টি স্প্যানের কাজ। বাকি ৭টি স্প্যানের মধ্যে দুটি স্প্যানের সুপারস্ট্রাকচার সাইডে মজুদ আছে।
বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪.৮০ কিলোমিটারের দীর্ঘ রেল সেতুর নির্মাণ হচ্ছে জাপান সরকারের অর্থায়নে। বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে বাস্তবায়নে যাওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ছিল ৯,৭৩৪ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় ৭২% বাড়িয়ে ১৬,৭৮১ কোটি টাকা করা হয়।
সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এই সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আগস্ট পর্যন্ত এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৬৯%।
প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, "২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও পশ্চিম অংশের সিভিল ওয়ার্ক কিছুটা পিছিয়ে যাওয়ায় বাস্তবায়ন কাজ চার মাস পিছিয়ে যাবে। তবে এর বেশি যেন না পিছায় সেজন্য এই অংশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দক্ষ জনবল, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির যোগান বাড়াতে বলা হয়েছে।"
এদিকে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেল সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন কাজের ডিজাইন ও ড্রইংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ অংশের ভৌত অগ্রগতি ৬.৮২%।
যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে যে রেললাইন রয়েছে, সেখানে রেলের ওজন ও গতির বিষয়ে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি মূলত সড়কসেতু, এ কারণে এই সেতুতে ট্রেন চলাচলে ওজন ও গতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে এই সেতুতে সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারে। এ বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। রেল সেতু নির্মাণ হলে ১২০ কিলোমিটার বেগে রেল চলতে পারবে। এছাড়া এর ওপর দিয়ে যে কোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনও চলতে পারবে।