অ্যান্টিজেন টেস্টে নেগেটিভ হলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই: গবেষণা
এনএস-১ পরীক্ষা ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ে একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। তবে এনএস১ টেস্টে নেগেটিভ হলেও পিসিআর টেস্টে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৪১% রোগীর। সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ এবং ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের যৌথ এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ডেঙ্গু সন্দেহ হলে শুধু ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফলাফলের উপরে নির্ভর না করে রোগীর শারীরিক লক্ষণসমূহের দিকে নজর দেওয়া উচিত। এছাড়া সহায়ক পরীক্ষা হিসেবে সিবিসি, ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি, ডেঙ্গু পিসিআর সহ অন্যান্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ গবেষকদের।
এ বছর ডেঙ্গুর লক্ষণযুক্ত অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ এবং ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের যৌথ উদ্যোগে "চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার কার্যকারিতা এবং ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ নির্ধারণ" শীর্ষক একটি গবেষণা কার্য সম্পন্ন হয়েছে।
গবেষণায় মূল গবেষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ এর বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ডা. রুখসানা রায়হান। এই গবেষণায় গবেষক হিসাবে আরও যুক্ত ছিলেন সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. জুলফিকার মামুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী, এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদুর রহমান খান।
গবেষণায় ১ দিন থেকে ৭ দিনের জ্বরে আক্রান্ত মোট ১৯৭ জন সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং লিখিত সম্মতিক্রমে সবার ডেঙ্গু এনএস-১, ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি ও ডেঙ্গু পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ৬৮ জন (৩৪.৫%) রোগীর দেহে পিসিআর পদ্ধতিতে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয়। এই ৬৮ জন রোগীর মধ্যে ২৮ জন (৪১%) রোগীর ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে।
রবিবার সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস এর সভাপতি অধ্যাপক ড.কাজী জুলফিকার মামুন ও সাধারণ সম্পাদক ড.তারেক মাহবুব খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, মানুষের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করতে ডেঙ্গু পিসিআর পরীক্ষা একটি সার্বজনীন স্বীকৃত পদ্ধতি। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ডেঙ্গু সন্দেহ করে প্রাথমিকভাবে শুধু ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। কিছু ক্ষেত্রে রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নিজ উদ্যোগে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষা করে থাকেন। ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ দেখে ডেঙ্গু হয়নি ভেবে অনেকেই বিষয়টি অবহেলা করেন এবং পরবর্তীতে ডেঙ্গু বিষয়ক নানা জটিলতায় আক্রান্ত হন। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হলেও অনেক সময় চিকিৎসকদের পক্ষে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় না।
এ গবেষণায় ৬৮ জন ডেঙ্গু পিসিআর পজিটিভ রোগীর মধ্যে ৬৩ জন রোগীর দেহে ডেন-২ সেরোটাইপ, ৪ জন রোগীর দেহে ডেন-৩ সেরোটাইপ এবং ১ জন রোগীর দেহে ডেন-২ ও ডেন-৩ উভয় সেরোটাইপ পাওয়া গিয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু সেরোটাইপ-২ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এনএস-১ নেগেটিভ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ডেন-৩ সেরোটাইপ সব চাইতে বেশি পাওয়া গেলেও এ বছর এখন পর্যন্ত যে কয়েকটি গবেষণা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে ডেন-২ সেরোটাইপ বেশি পাওয়া গিয়েছে। চলমান ডেঙ্গু মহামারিতে অত্যধিক সংখ্যায় ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ার পিছনে এটি একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকেরা।