উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর যাত্রী সংকটে দূরপাল্লার বহু ট্রিপ বাতিল
রাজধানীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে সমাবেশের কারণে সকাল থেকে গাবতলী থেকে বাস রাজধানীর ভিতরে ঢুকতে না পারায় গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট কক্সবাজার রুটের বহু ট্রিপ বাতিল করেছে বিভিন্ন দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটের বহু ট্রিপ বাতিল করেছে অনেক পরিবহন।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী দূরপাল্লার বিভিন্ন বাস কাউন্টারে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এসময় টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায় বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রী নেই বললেই চলে।
গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার রুটের শ্যামলী পরিবহনের তারক কুন্ডু নামে একজন কাউন্টার মাস্টার বলেন, 'ভোরে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে একটি করে গাড়ি ছেড়ে গেলেও এর পরে আর কোনো ট্রিপ যায়নি। সমাবেশের কারণে গাড়ি রাজধানীর মধ্যে ঢুকতে পারছে না, তাই কর্তৃপক্ষ আপাতত গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছে।'
তারক কুন্ডু বলেন, সমাবেশের কারণে সকালের পরে এই তিন রুটে তাদের প্রায় ১৫টি ট্রিপ বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিকাল কিংবা সন্ধ্যার পর থেকে আবার ট্রিপ যাওয়া শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম বলেও তিনি জানান। আবার সকালের দিকের ট্রিপ বাতিল হওয়ায় অনেক যাত্রী ফিরেও ঘুরে গেছেন।
'শহরের মধ্যে বাস ঢুকতে না পারায় দু-একটি পরিবহন ছাড়া অধিকাংশ পরিবহনই আজ ট্রিপ বাতিল করেছে এই রুটে,' বলেন তিনি।
শ্যামলী কাউন্টারের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত যাত্রী আসাদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'স্ত্রীকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম যাব। ভেবেছিলাম দুপুরের দিকে গাড়ি পাব, তাই কাউন্টারে এসেছিলাম। এখন এসে বিকালের আগে কোনো গাড়ি পাচ্ছিনা।'
চট্টগ্রাম রুটের হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার মেহেদী পারভেজ টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের ৮-১০ টি গাড়ি সকাল থেকে সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার রুটে ছেড়ে গেছে। গাবতলী থেকে ছোট বাসে যাত্রীদের সায়েদাবাদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।'
উত্তরবঙ্গ রুটের নাবিল এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার অভি বলেন, 'সমাবেশের কারণে মানুষের মধ্যে বেশ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাজ করছে, যার কারণে আজ টার্মিনালে যাত্রী কম। উত্তরবঙ্গ রুটে আমাদের গাড়ি চলছে, তবে যাত্রী কম থাকায় ৪-৫টি ট্রিপ বাতিল করতে হয়েছে।'
উত্তরবঙ্গ রোজিনা এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার ইকবাল হোসেন এবং টিআর ট্রাভেলসের কাউন্টার স্টাফ মাহবুবুর রহমানও জানান, আজ যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম।
যাত্রী না থাকায় দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী পরিবহনগুলোও আজ সকাল থেকে তাদের অধিকাংশ ট্রিপ বাতিল করেছে বলে জানিয়েছেন এসব পরিবহনের কাউন্টার মাস্টাররা।
বরিশাল রুটের চলাচলকারী একে ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার পলাশ বলেন, 'যাত্রী নাই বললেই চলে। সকাল থেকে আমাদের অধিকাংশ ট্রিপ বাতিল করা হয়েছে।'
একই তথ্য জানান বলেন দিগন্ত পরিবহন, গোল্ডেন লাইনসহ দক্ষিণবঙ্গের আরও বেশ কিছু পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীতে সমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে টাঙ্গাইলেও। চালকরা জানান, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ থাকায় নিজেদের পরিবহনের ক্ষতির ভয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে মালিক ও চালকরা, যার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট।
টাঙ্গাইলের যাত্রীরা জানান, মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। মহাসড়কে দু-একটি গণপরিবহন এলেও তারা ভাড়া চাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে সিএনজিসহ বিভিন্নভাবে ঢাকায় যেতে হচ্ছে প্রয়োজনের তাগিদে।