শ্রমিক অসন্তোষ: ৫০০ কারখানা বন্ধ, শনিবার কারখানা খোলার প্রতিশ্রুতি মালিকদের
ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চলমান শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারে পাঁচ শতাধিক কারখানা বন্ধ রাখার পর শনিবার কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, "আমরা শনিবার সব কারখানা খুলে দেব। আশা করছি, শ্রমিকরা ওইদিন কাজে যোগ দেবেন। যদি কোন শ্রমিক কাজে যোগ না দেন তাহলে আমরা পারমানেন্ট শাটডাউনে যাবো।"
বুধবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির যে প্রস্তাব মালিকরা করেছেন, তা অযৌক্তিক। বাজারদর অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণের জন্য মজুরি বোর্ডে সুপারিশ জমা দেবে শ্রম মন্ত্রণালয়।"
গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মজুরি নির্ধারণের জন্য উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মজুরি বোর্ড আসন্ন বৈঠকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
"যদি ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন," তিনি যোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী শ্রমিকদের নিজ নিজ কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তবে শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলছেন, শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে হলে অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য মজুরি ঘোষণা করতে হবে।
এদিকে, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল মো. তাওহিদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "পরবর্তী সভাতেই শ্রমিকদের গ্রহণযোগ্য মজুরি দেওয়া উচিত।"
বিজিএমইএ গতকাল প্রায় ২০০টি কারখানা বন্ধের কথা জানিয়েছে। তবে গতকাল কোনো বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। গত কয়েকদিনে চলমান অস্থিরতার কারণে বুধবার পর্যন্ত তিন শতাধিক কারখানা বন্ধ ছিল।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, শ্রমিকরা গতকাল আশুলিয়ায় দুটি কারখানা ভাংচুর করেছে। অন্যদিকে, মিরপুর-১০ ও মিরপুর-১২ এলাকায় টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, "আমরা খবর পেয়েছিলাম যে শ্রমিকরা এখানে জড়ো হচ্ছে। তখন আমরা খুব কম পরিসরে টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে তাদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হই। তাদের মধ্যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।"
পরিস্থিতি মোকাবেলায়, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গার্মেন্টস শিল্প অঞ্চলগুলোতে যৌথ টহল চালিয়ে শিল্প পুলিশ এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে একযোগে কাজ করে।
এদিকে গার্মেন্টস শিল্পে অরাজকর পরিস্থিতি এ শিল্পের জন্য মঙ্গলজনক নয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইফতেকার হোসেন এক বিবৃতিতে সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণ করার আহ্বান জানান।
চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহান খান বলেন, বিএনপি শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে শ্রমিকদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
২১ অক্টোবর শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম মজুরি বর্তমান ৮,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০,৩৯০ টাকা করার দাবি জানান। কিন্তু মালিকরা মজুরি ১০,৪০০ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
৩০ অক্টোবর আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে পুলিশ ও তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হয়।
কয়েকদিনের টানা সংঘর্ষের পর বুধবার কারখানার মালিকরা পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০,৪০০ টাকার চেয়ে নির্ধারণে রাজি হয়েছেন। তবে, নতুন প্রস্তাবিত মজুরি কত হবে তা এখনও জানানো হয়নি।
এদিকে, মঙ্গলবার মিরপুরে বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে গার্মেন্টস কর্মী জোসনা বেগম নিহত হওয়ার দাবি করা হলেও, তিনি জীবিত আছেন বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার মিরপুরের পল্লবী এলাকায় জোসনা বেগমকে পাওয়া গেছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহমান।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গতকাল তাদের কর্মসূচি চলাকালে গার্মেন্টস শ্রমিকরা কথিত হামলা ও মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে।
শ্রমিকরা জানায়, সংঘর্ষে জোসনা নিহত হয়, কিন্তু তার লাশ নিখোঁজ হয়েছে। পরে র্যাব ঘটনাটি তদন্ত করে। মিরপুরের পল্লবীর কালশী এলাকায় জোসনার খোঁজ পান তারা। র্যাব কর্মকর্তা বলেন, "তিনি সুস্থ আছেন। বর্তমানে বাড়িতে আছেন। র্যাব-৪ তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।"
র্যাব-৪ এর অতিরিক্ত এসপি মুজাহিদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "মঙ্গলবার পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে আমরা নিহতদের বিস্তারিত জানাতে বলেছিলাম। তারা নাম বা অন্য কিছু জানাতে পারেনি।"
"পরে আমরা আগারগাঁও ও মিরপুরের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অনুসন্ধান চালাই। সেখান থেকে জোসনা বেগম নামে একজন আহত শ্রমিকের কথা জানতে পারি। কালশীতে রহমত ক্যাম্পে অবস্থিত নিজ বাড়িতে রয়েছেন তিনি। তিনি সংঘর্ষে আহত হলেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়," বলেন তিনি।