৫ বছরে দেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের হার বেড়েছে ১১%: আইইডিসিআর
দেশে চলতি বছর বহুল ব্যবহৃত বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ৮২% পর্যন্ত কার্যকারিতা হারিয়েছে। পাঁচ বছর আগে যা ছিল ৭১%। সুতরাং বিগত পাঁচ বছরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের হার বেড়েছে ১১%।
বুধবার (২২ নভেম্বর) রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অডিটরিয়ামে জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন হাবিব। ২০১৭-২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু বাংলাদেশে ভয়াবহ হারে বাড়ছে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রোগীদের ক্ষেত্রে লিনেজোলিড জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের হার ৭০ শতাংশ। আর আউটডোরে প্রতিরোধের হার ৮২ শতাংশ। এখানে কার্বপেনমের মতো ওষুধের প্রতিরোধী হার ৮৪ শতাংশ।
ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রস্রাবে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া যায় ৭০ শতাংশ। তবে রক্তে এ হার কিছুটা কম, ১০ শতাংশ।
তিনি বলেন, "ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখছেন। আর না দিলে আবার রোগীও অসন্তোষ প্রকাশ করে যে, তাকে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়নি, তার মানে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন মেডিকেল অডিট।"
দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার নমুনা নিয়ে এই গবেষণা চালায় আইইডিসিআর।
গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি খুঁজে পাওয়া জীবাণু ই-কোলাইয়ের বেলায় পোল্ট্রি শিল্পে ব্যবহৃত ১২টি অ্যান্টিবায়োটিকের ৮টিই অকার্যকর হয়েছে অন্তত ৪০%। অ্যাম্পিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিনের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৯০%। ওয়াচ গ্রুপ ও রিজার্ভ গ্রুপের এসব অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর ছিল ডায়রিয়া, প্রস্রাবে সংক্রমণ ও ফুসফুসের সংক্রমণ সহ শরীরের বিভিন্ন ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, "সেফালোস্পোরিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক জীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ফলে সার্জারির রোগীদের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অপারেশন করতে গিয়ে আরো দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগী যক্ষায় আক্রান্ত। তাদের অধিকাংশ একাধিক ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষায় আক্রান্ত। শিগগিরই নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আসার তথ্য আমাদের জানা নেই। তাই এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মানুষের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।"
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইডিসিআর'র এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
বক্তারা আরও বলেন, জেলা হাসপাতালগুলোতে ব্লাড কালচার হয় না। এ কারণে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন তো রয়েছেই। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বক্তারা প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করার পরামর্শ দেন।