ভাঙ্গন ঠেকানো ও আন্দোলন জোরদারের পরিকল্পনা বিএনপির, আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
নিজেদের দল সামলানো ও সমমনা সরকার বিরোধী অন্যান্য দলে ভাঙ্গন ঠেকাতে জোর দিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি দাবি আদায়ে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে আরও জনসম্পৃক্ততা বাড়নোর পরিকল্পনা নিয়ে এগাচ্ছে দলটি- দলীয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আবারও সপ্তম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেছে দলটি। আগামী রবি ও সোমবার (২৬ ও ২৭ নভেম্বর) দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ অবরোধের ঘোষণা দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেবার আর মাত্র সাত দিন বাকি। বিরোধী দল বিএনপির কাছ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আভাস এখনো মিলছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে -বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, তাদের আন্দোলন সঙ্গী আর কোন দলকে যাতে সরকার চাপে-টোপে ফেলে নির্বাচনে না নিতে পারে সেজন্য দলের স্থায়ী কমিটি দিয়ে ৩ সদস্যের কমিটিও করেছে দলটি।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত দল ৬টি। দুদিন আগে দুটি দল জোট ত্যাগ করে নির্বাচনে চলে যায়।
বর্তমানে বিএনপি ছাড়া অন্য দলগুলো হলো—লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এ দলগুলোর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
ছোট দলগুলোর নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণাকে তাদের 'রাজনৈতিক ভুল' বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তার মতে, জনগণ একে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করবে। তারা যে ভুল করেছে, ভবিষ্যতে তা তারা বুঝতে পারবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, "সরকার অনেক দিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের লোভ-ভীতি দেখিয়ে জোট ভাঙার চক্রান্ত করছে। যারা দুর্বল, লোভী, তারা এতে পরাজিত হয়। কিন্তু আন্দোলন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। যুগপৎ থেকে বের হয়ে গিয়ে তারা নিজেদের জনস্বার্থ ও আন্দোলনবিরোধী স্বার্থলোভী মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের কোনো ক্ষতি হবে না।"
এদিকে বৃহস্প্রতিবার ঢিলেঢালাভাবে সারাদেশে পালিত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচি। দূরপাল্লার যানবাহন খুব একটা না চললেও রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে।
গতকাল বগুড়ায় দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমা হামলায় এক ট্রাক চালক গুরুতর আহত হয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফার 'চূড়ান্ত আন্দোলন' করতে গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখী ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।
'নাশকতার' মামলায় দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকেই কারাগারে; কেউ আত্মগোপনে, আবার কেউবা নিশ্চুপ। গত ২৮ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সূত্র জানায়, পরবর্তী কর্মসূচি ও বাস্তবায়নের কৌশল নিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতারা ঘন ঘন ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন।
একই সঙ্গে সমমনা দল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতারাও নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন।
আন্দোলন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি মাথায় নিয়েই বিকল্প কর্মসূচি দেবেন তারা। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন-কর্মসূচির ধরনও বদল হবে।
সামনে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ঘেরাও, বিক্ষোভ ও সমাবেশের কর্মসূচির চিন্তাও করছে বিরোধী দলগুলো।
বিএনপির আরও ৪১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, "২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দলের ৪১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ৩ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিএনপির আন্দোলন মিত্র জামায়াতে ইসলামীও গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের কথা জানায়।
বৃহস্প্রতিবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে রিজভী তার বক্তব্যে সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, "দেশজুড়ে বিএনপি, সহযোগী সংগঠন এবং সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন চলছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নির্বিচারে। বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের পক্ষ থেকে বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তাদের লোকজনও ধরা পড়ছে। কিন্তু তাঁদের ছেড়ে দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরে এনে দোষী প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।"