বিগত ২ নির্বাচনে একজনও না জেতা কাদের সিদ্দিকীর দল এবার দিয়েছে ৩৪ প্রার্থী
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন বর্জন করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। কিন্তু, এবার ২০২৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও নির্বাচনে গেছেন তিনি। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এর গামছা প্রতীকে সারাদেশে ৩৪ প্রার্থী দিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে দেখা যায়, প্রথমবার অংশগ্রহণ করে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩৯ জন প্রার্থী দিয়েছিল। এদের মধ্যে মাত্র ১ জন নির্বাচিত হন টাঙ্গাইল-৮ থেকে। ঐ নির্বাচনে জিতে আসা দলের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ভোট পান ৮০ হাজার ৫৫৮টি। আর টাঙ্গাইল-৫ আসনে কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী ৬৮ হাজার ১৬৭ ভোট পান। অন্যদিকে টাঙ্গাইল-৩, ৪ আসনে কাদের সিদ্দিকীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। দলটির সব প্রার্থী মিলে ভোট পায় ২ লাখ ৬১ হাজার ৪০৯, যা মোট ভোটের ০.৪৭ শতাংশ। টাঙ্গাইল-৮,৫ আসন ছাড়া সারাদেশে বাকি সব আসনেই দলটির জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
ইসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১ সালের পর থেকে বিগত সবগুলো নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আর কেউ কোন সময় জিততে পারেননি। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ এর নির্বাচনে দলটির ভোট কমেছে।
ইসির তথ্যানুসারে দেখা যায়, গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৮ জন প্রার্থী দিলেও কেউ জিততে পারেননি। প্রায় সব প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ৮ প্রার্থী মিলে ভোট পান মাত্র ১ লাখ ৪৪ হাজার ১১৫টি, যা মোট ভোটের ০.১৭ শতাংশ।
২০০৮ সালে দলটি ৪৭ জন প্রার্থী দিয়েছিল, যা ছিল এযাবৎ সর্বোচ্চ। কিন্ত কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি ঐ নির্বাচনেও। সব প্রার্থী মিলে ভোট পায় মাত্র ১ লাখ ২ হাজার ৮৭৯টি, যা মোট ভোটের ০.১৫ শতাংশ। প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
২০০৮ সালে টাঙ্গাইল-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত মোমেন শাহজাহান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তিনি মোট ভোটের ৫৫.৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। বিএনপির প্রার্থী আহমেদ আজম খান ৬৫ হাজার ৫২১ ভোট (২৭.২৯ শতাংশ) পেয়ে দ্বিতীয় হন। এবং মাত্র ৩৮ হাজার ৭৭৫ ভোট বা ১৬.১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন কাদের সিদ্দিকী।
কিন্তু, এবার দলটির নেতা কাদের সিদ্দিকী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে গণভবনে দেখা করার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতার সবুজ সংকেত পাওয়ার পর নিজ এলাকায় তফসিল ঘোষণার আগে বেশ কয়েকটি সভাও করেন। এবারের নির্বাচনে আত্মবিশ্বাসী কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও আওয়ামী লীগ টাঙ্গাইল-৮ আসনে অনুপম শাহজাহান জয়কে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইল জেলা রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, 'নির্বাচন হচ্ছে ভোটারদের নিয়ে। ভোটাররা যদি উৎসাহিত হয় এবং তারা যদি ভোট কেন্দ্রে যায়, ভোট দেয় তাহলে সেটাকে তো উৎসব মুখরিত পরিবেশ বলতেই হবে। সারাজীবন কখনো কোনো আশংকা করিনি, এখনো করি না। আমি সব সময় মোকাবিলা করতে পছন্দ করি। নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে কিনা– সেজন্য আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি এবং আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীও দাঁড়িয়েছেন। দেখা যাক ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কেমন হয়।'
তিনি আরও বলেছেন, 'পরিস্থিতি এখন যেভাবে আছে, আমি আশা করবো ভবিষ্যতে আরো ভালো হবে। যদি তেমনটা না হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বদনাম হবে, মর্যাদা হারাবেন।'
মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও ১৯৯৯ সালে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন, এবং ঐ বছরের ২৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই সভাপতি পদে আছেন।