এত দিন উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে সরকার এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছে : রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা তাঁর অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার দায়ভার বিএনপি ও বিদেশিদের ওপর চাপিয়ে দায় এড়াতে চাইছেন।
আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
এসময় রিজভী বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের লোকজন দেশের মানুষকে উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছেন। আর এখন বলছেন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করবে বিএনপি! কি হাস্যকর কথা! বাংলাদেশের মানুষকে শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভাবেন বোকা, অবুঝ-নাদান মূর্খ।'
এর আগে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, বিএনপি ও বিদেশিরা আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর পরিকল্পনা করছে।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, 'বিনা ভোটের সরকার দেশের সমস্ত সম্পদ লুটপাট করে রাজকোষ শেষ করেছে। আমদানি করার মতো ডলার নাই। এলসি বন্ধ। সব অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের পাহাড় আর ১৫ বিলিয়ন ডলারের তলানিতে মুদ্রা রিজার্ভকে নামিয়েছে। এখন কমেডি করছেন রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী।'
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, 'অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, তিন মাস চলার মতো রিজার্ভ অবশিষ্ট আছে। তারপর দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া গতান্তর থাকবে না। সারা দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। আসলে আওয়ামী লীগ আর দুর্ভিক্ষ একে অপরের পরিপূরক। আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ আর দুর্নীতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে দূর্ভিক্ষ আনে। ৭৪' সালে যেভাবে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল– আওয়ামী লীগের দুর্নীতি লুটপাট টাকাপাচার অবিচার অনিয়মের কারণে, দেশে এখন আবারো সেই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি।'
রিজভী বলেন, গুম, খুন, ক্রসফায়ারের শিকার হওয়াদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের উদ্যোগে আজ সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বজনরা তাদের কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু, পুলিশ তাদের সেখানে দাঁড়াতে দেয়নি। সরকার তাদের কথা বলতে দিতেও ভয় পাচ্ছে। আজকে গুম খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরাও কথা বলতে পারে না।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম আইন অনুযায়ী--কোনো ব্যক্তিকে গুম করা একটি মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ। স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সমাজের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে দিতে এই ভয়াবহ অপরাধটি করে থাকে। বাংলাদেশেও গুমের ঘটনাগুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ ছাড়াও গুমের শিকার হয়েছে দেশের ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষও। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি উত্তরণে সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংস্থা, সুশীল সমাজসহ বিবেকবান সকল মানুষকে সোচ্চার হয়ে এই সরকারের পতন ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, আগামীকাল বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং সমালোচনা সত্ত্বেও, সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দেড় দশক ধরে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬৪৭ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, ৩৯৯ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, ৩ জনের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৬১ জনের এখনো পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি। যদিও, আমাদের হিসেবে-প্রকৃত সংখ্যা আরো তিন থেকে চার গুণ বড়।