নির্বাচন ঠেকাতে শেষ সপ্তাহে আরও বড় কর্মসূচির পরিকল্পনা বিএনপি-জামায়াতের
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে এক সপ্তাহ জোরালো আন্দোলন করতে চায় বিএনপি-জামায়াত ও সরকার বিরোধী সমমনা দলগুলো। সে লক্ষ্যে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে– ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত– সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার পরিককল্পনা তারা।
আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতনে এখনও আশাবাদী সরকার বিরোধীরা; তবে যদি পতন করতে সফল নাও হয়, তাহলে আন্দোলনের ফলে ভোট কেন্দ্র 'ভোটার শূন্য' করার সর্বোচ্চ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলগুলো।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ৭ দিনই হরতাল-অবরোধ থাকবে। নির্বাচনের দিন 'গণকারফিউ' নামক কর্মসূচিও ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। আন্দোলন সফল করতে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপি-জামায়াতের যৌথ 'বিশেষ কমিটি' গঠন করা হয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছে প্রতিনিয়ত সিরিজ বৈঠক।
আগামী ১ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচিতেই মধ্যমেই থাকার চিন্তা দলগুলোর। ২৬, ২৭, ২৮ ডিসেম্বর সারাদেশে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করবে ব্যাপকভাবে। এছাড়াও, সরকার বিরোধীরা আগামী ২৯ ডিসেম্বর আলেম-ওলামাদের মুক্তির দাবিতে ঢাকায় হেফাযতে ইসলামের মহাসমাবেশকে পক্ষে সরকারের ওপর চাপ হিসেবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, "ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে আমাদের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি চলছে। এরপর ভোটের দিনটি সামনে রেখে কর্মসূচি দেওয়া হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলতে থাকবে। দেশের জনগণ অনশ্যই আমাদের কর্মসূচিতে সাড়া দেবে।"
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, "আমরা অসহযোগ আন্দোলনে রাজপথে রয়েছি। সরকারের পতনের দাবিতে এবং দেশের গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ফরম্যাটের কর্মসূচি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কী কর্মসূচি হবে, সেটি এখনি বলা সম্ভব নয়।"
গত এক সপ্তাহে সরেজমিনে দেখা যায়, দলের হাইকমান্ডের এমন কঠোর মনোভাবে রাজপথের চিত্রও অনেকটা পাল্টাচ্ছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনের থাকার পর বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীই এখন সক্রিয় হয়েছেন, বেশ কিছু সিনিয়র নেতাদের রাজপথের মিছিলেও দেখা গেছে। দলের স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন।
এছাড়াও গত ২৪ ডিসেম্বর জামায়াতের ইসলামি সর্বোচ্চ হাইকমান্ড "নির্বাহী পরিষদ" নির্বাচন প্রতিহতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত পাশ হয়েছে। এবং নেতাদের কর্মীদের যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে ঢাকায় ঢোকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগের এ সাতদিন দেশের বর্তমান পরিস্থিতির এ চিত্র আন্দোলনের ফলে বদলানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার দেশ কে নির্বাচনী উৎসব-আমেজ রূপে দেখাতে চাইছে, সরকার বিরোধীরা সেটাকে আন্দোলনমুখী পরিবেশ ও সারাদেশ অচল করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে। অহসযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি অফিস-আদালতে তালা মারার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে।
আগামী এ কয়েক দিনে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে সারাদেশের নেতাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সম্বন্বয়ে বিভাগীয় টিম গঠনের পাশাপাশি জেলা ও মহানগরেও নেতাকর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করতে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এসব টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন-বলেও দলীয় সূত্র জানায়।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু হয়। এতে অনেকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান নেতাকর্মীরা। তখন থেকেই লাগাতার কঠোর আন্দোলনের অংশ হিসেবে যুগপৎভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি এবং মিত্ররা। ধরপাকড় ও হামলা-মামলা উপেক্ষা করে বিক্ষিপ্ত মিছিল-পিকেটিংয়ের মাধ্যমে কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।