বিদ্রোহীদের আক্রমণে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের ৯৫ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে
মিয়ানমারে অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এ পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে কোণঠাসা হয়ে তারা অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আহত ১৫ জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার সকাল পৌনে ৮টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে রবিবার রাতে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্য সংখ্যা জানানো হয়েছিল ৬৮ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিপির ৬৮ জন সদস্যের মধ্যে ১৫ জনেরওে বেশি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এছাড়া সোমবার ভোর পর্যন্ত নতুন করে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৭ জনের কতজন আহত তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শরিফুল ইসলাম বলেন, 'রবিবার দিনভর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। এতে সংঘর্ষের জেরে রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিজিপির ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে আশ্রয় চাইলে বিজিবি তাদের হেফাজতে নেয়।
তিনি বলেন, 'বিজিবি তাদের (বিজিপি) নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। বিজিপির আহত সদস্যের চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।'
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান বলেন, 'মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দুই সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
তারা হলেন- রি লি থাইন (২২) ও জা নি মং (৩০)।
পালংখালীর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়েনের ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরের ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি ও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে সকাল থেকে গোলগুলির আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি।
তিনি বলেন, 'সীমান্তে তার এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। সকালে নতুন করে গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও মানুষের মাঝে এখনো আতঙ্ক কাটেনি।'
তবে সোমবার সকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে দুই-তিনটি গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম।
এর আগে রবিবার বিকেলে বিজিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
তিনি বলেন, 'পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা তাদের নিরস্ত্র করেছি। তারা এখন আমাদের হেফাজতে আছে। পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য আমরা সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আমরা সীমান্তে সতর্ক আছি।'
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, 'মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে শোনা যাচ্ছে। বিজিবি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।'
গতকাল, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সীমান্ত শিবির দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী দলগুলো মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ক্রমাগত গুলি, মর্টার শেল ও রকেট বিস্ফোরিত হচ্ছে। গুলিতে এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশি সীমান্তের এক বাসিন্দা বলেন, 'সকাল ৮টা থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অনেক ভয়ে আছি। কী হবে জানি না।'
এদিকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে চলছে মুহুর্মুহু মর্টার শেল ও গুলিবর্ষণ। এতে সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তুমব্রু সীমান্তের কাছে দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
গত শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল, গোলাগুলি চলছে। তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশি দুই বাড়িতে মর্টার শেলের বিস্ফোরিত অংশসহ গুলি এসে পড়েছে।