এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম শহরে চালু হচ্ছে ট্যাক্সিক্যাব সেবা
নতুন উদ্যোগে চালু হওয়া চট্টলা সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড এপ্রিল মাস থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ট্যাক্সিক্যাব পরিষেবা চালু করতে যাচ্ছে। মেগা যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে গতিশীলতা বাড়ার কারণে নগরীতে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী এ পরিবহন ব্যবস্থাটির ক্রমবর্ধমান চাহিদা তৈরি হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি ১৫০টি ট্যাক্সিক্যাব দিয়ে পরিষেবা শুরু করতে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। সবগুলো ট্যাক্সি চালু হলে এ বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত ১২৫ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য যাত্রীকে দিতে হবে ৩৪ টাকা করে। আর প্রতি মিনিটের জন্য ওয়েটিং চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে চার টাকা ২৫ পয়সা।
অকটেন-চালিত ১৫০০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার ট্যাক্সিক্যাবগুলো জাপানের টয়োটা থেকে আমদানি করা হবে। এগুলোতে জিপিএস প্রযুক্তি থাকবে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ ট্যাক্সিগুলোতে নিরাপত্তা ট্র্যাকিং, মনিটরিং, মিটারিং এবং ভিডিও সুবিধা থাকবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ইতোমধ্যে চট্টলা সার্ভিসকে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০ অনুযায়ী যানবাহন আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
ট্যাক্সিক্যাবগুলোকে সিএমপি কর্তৃক চালু 'আমার গাড়ি নিরাপদ' অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধনসহ গাড়ি ও ড্রাইভারের তথ্য সম্বলিত কিআর কোড গাড়ির দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়া গাড়ির ছাদে 'TAXICAB' লেখা সাইন থাকতে হবে।
২০১৩ সালে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট চট্টগ্রাম শহরে একটি ট্যাক্সিক্যাব পরিষেবা চালু করেছিল। সেবাটি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই বছর পর ৫০টি গাড়ির পুরো বহর ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
কিন্তু তারপর থেকে পরিস্থিতির অনেক বদলেছে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখন নিয়মিত ভ্রমণ করছেন। পাশাপাশি উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামোর কারণে এখানে পণ্য পরিবহনেও গতিসঞ্চার হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম–ঢাকা এবং চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় জনগণের চলাচলের জন্য বিকল্প পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
চট্টলা সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, 'শিল্প, বাণিজ্য, বিশেষ করে পর্যটনশিল্পে উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হচ্ছে সুগম্য, সাশ্রয়ী, দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা।'
তিনি বলেন, কম জ্বালানি খরচের জন্য আধুনিক ট্যাক্সিক্যাবগুলোকে সারাবিশ্বে পরিবহনের একটি উপযুক্ত মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর এবং মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরের মতো মেগা প্রকল্পগুলো পার্বত্য জেলাগুলোতে জনগণের যাতায়াতের সুযোগ বাড়িয়েছে।
আনোয়ার বলেন, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক পাহাড়ি জেলাগুলোতে আসেন। তাই এসব জায়গায় ট্যাক্সিক্যাবের জুড়ি নেই।
আর্মি ওয়েলফেয়ারের ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসটি জনপ্রিয় হয়নি, কারণ এটির কেবল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রুট পারমিট ছিল।
তবে নতুন সার্ভিসটি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনীতে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় নতুন যানবাহনসহ নগরীতে মানসম্মত যাত্রীসেবার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে বলেন, নতুন উদ্যোগে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস চালু হলে যাত্রীরা সাশ্রয়ী ভাড়ায় চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকায় নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন।