আমার একমাত্র ছেলে ফিরবে তো: প্রশ্ন জিম্মি জাহাজের ইঞ্জিন অয়েলার শামসুদ্দিনের মায়ের
সোমালি জলদস্যুদের কবলে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ইঞ্জিন অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন (শিমুল)। পরিবারের সঙ্গে তার শেষ বার কথা হয় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকালে। এর পর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাহাজের খবর পেলেও ছেলের অবস্থা জানতে না পেরে দুশ্চিন্তায় অস্থির মা শাকেরা বেগম।
শামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মধ্যবন্দর গ্রামে। তার তিন মেয়ের মধ্যে রামিছা আক্তার (১২) ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও সাঈদা আক্তার (৬) প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সবার ছোট মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের বয়স ১৪ মাস।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকালে শাকেরা বেগমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ''মঙ্গলবার বিকালে ফোন করে আমার ছেলে বলে- 'আমরা বিপদে পড়েছি। আমাদের জাহাজ ডাকাতরা দখলে নিয়েছে। তাদের কাছে অস্ত্র আছে। আমাদের মোবাইল কেড়ে নিচ্ছে।' এর পরই ফোনটি কেটে যায়। তখন থেকে ছেলের সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি।''
শাকেরা বেগম জানান, শামসুদ্দিনের সঙ্গে তার মেয়েরা দিনে কয়েকবার ভিডিও কলে কথা বলত। ওদের বোঝানোই যাচ্ছে না যে ওদের বাবা বিপদে আছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাকেরা বেগম বলেন, '২০১৫ সালে স্বামী হারানোর পর ছেলে শামসুদ্দিনই ছিল পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। তার আয় দিয়ে তার তিন মেয়ে, স্ত্রী ও আমার খরচ চলে।'
তিনি বলেন, 'এবার জাহাজে উঠার আগে ব্যাংক ও মহাজনের কাছে স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির কাজ করেছে। জাহাজ থেকে ফিরে ঋণ পরিশোধ ও মোটরসাইকেল কেনার কথা। এই মুহূর্তে টাকা-পয়সা নয়, আমার একমাত্র ছেলেকে ফিরে পাব কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।'
শামসুদ্দিনের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, 'তিন মেয়েকে ঘিরেই তার (শামসুদ্দিন) সবকিছু। প্রতিদিনই ওদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতেন। মেয়েদের সঙ্গে গত সোমবার তার সর্বশেষ কথা হয়। এরপর মঙ্গলবার বিকাল ৫ টা ৪০ মিনিটেও ফোন করেছিলেন শামসুদ্দিন। ফোন করে তিনি জলদস্যুদের কবলে পড়ার কথা জানান।'
সে সময় শামসুদ্দিন ফোনে তার মাকে বলেছিলেন, 'জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমাদের জিম্মি করেছে। প্রত্যেক জলদস্যুর হাতে ভারি অস্ত্রশস্ত্র আছে। আমরা ভয়ে আছি। তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি।'
এরপরই সংযোগটি কেটে যায়।
রিনা আক্তার বলেন, 'জাহাজের মালিক ও সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি- যেকোনো মূল্যে আমার তিন সন্তানের বাবাকে ফিরে পাওয়া। জাহাজে থাকা সব নাবিককে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনা।'
শামসুদ্দিনের পরিবার জানায়, তিন বছর আগে কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ে চাকরি নিয়েছিলেন শামসুদ্দিন। এর আগে ফজলে শিপিং নামের একটি কোম্পানিতে তিন বছর চাকরি করেছেন। মাঝখানে কিছুদিন বেকারও ছিলেন। গত ২৫ নভেম্বর এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ-তে ওঠার জন্য বাড়ি ছাড়েন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিটে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর দেওয়া তথ্যমতে, এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়া উপকূল থেকে ৭ নটিকাইল মাইল দূরে সাগরে নোঙর করেছে।
এর আগে ২০১০ সালে একই মালিকের জাহাজ 'এমভি জাহাজ মণি' সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। মালিকপক্ষের উদ্যোগে ১০০ দিন পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়।