ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ বুয়েটে
বুধবার মধ্যরাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রবেশের প্রতিবাদে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়ে এ বিক্ষোভ শুরু করেন বুয়েটের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী।
আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ঘটনার সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের প্রতিবাদে আজ টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছেন বুয়েটের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকায় প্রশ্ন হাতে ফেরত গেছেন পরীক্ষা নিতে আসা শিক্ষকরা।
সকাল থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন; প্রসাশনের কাছে বেশকিছু দাবিও তুলে ধরেন তারা।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছাত্রলীগ নেতাদের রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশে সহায়তাকারী শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দিচ্ছে- তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ইস্যুর সঙ্গে জড়িত ইমতিয়াজ রাব্বীসহ ৬ জনকে বেলা ২টার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কারের আল্টিমেটাম দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এই আল্টিমেটাম দেন তারা।
গণমাধ্যমকে শিক্ষার্থীরা বলেন, "গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত অনুপ্রবেশে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছি। এই মর্মে শুক্রবার বুয়েট ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি পেশ করেছিলাম। সেগুলোরই বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সকলকে সম্যক অবহিত করছি এবং ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী আমাদের পরিবর্তিত দাবি পুনরায় পেশ করছি।"
তারা বলেন, "গতকাল আমরা বুয়েটের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আমাদের আন্দোলনের প্রথম দাবি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বি, 'বুয়েটে সকল রকম রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ'— এই নীতিমালা ভঙ্গ করার কারণে আমরা শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিলের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন কর্তৃক ইমতিয়াজ রাব্বির হল বহিষ্কার ইতোমধ্যে নিশ্চিত করলেও বুয়েট থেকে তার স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার এখনও নিশ্চিত করেনি।
"আমরা শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি," যোগ করেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, "বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তারা কেন কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল– এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা শুক্রবার আমরা প্রশাসনের কাছে চেয়েছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য আমাদেরকে মৌখিক ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা এই মুহূর্তে এই দাবিটির বিষয়ে বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত নোটিশ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।"
আল্টিমেটাম ঘোষণার পর অন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্থান ত্যাগ করতে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরও গত বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায়। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা কয়েক দফা দাবি নিয়ে বুয়েট প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানান।
গতকাল বিক্ষোভ থেকে দাবি আদায়ে আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ দাবি না মানলে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমানের অপসারণের দাবিতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এক শিক্ষার্থীর সিট বাতিলসহ তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বুয়েট প্রশাসন।
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনার পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন।