সোহেল চৌধুরীকে কেন হত্যা করা হয়েছিল, যে কারণ জানিয়েছিলেন আশীষ ওরফে বোতল চৌধুরী
দীর্ঘ ২৫ বছর পর আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আবদুল আজিজ, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় বাকি ছয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
সোহেল চৌধুরী হত্যার এ ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল গোটা দেশে। এ ঘটনার দীর্ঘ ২৪ বছর পর ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান থেকে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আশীষ রায় চৌধুরী র্যাপিট অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক জবানবন্দিতে সোহেলকে হত্যার কারণ জানান।
ওই সময় আশীষের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবে চলত নানা অনৈতিক কার্যক্রম। এর প্রতিবাদ করেছিলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। এ নিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। প্রকাশ্যে অপমান করায় সোহেল চৌধুরীকে উচিত শিক্ষা দিতে ওই ক্লাবের স্বত্বাধিকারী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের পরিকল্পনায় হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে।
হত্যার দায়িত্ব নেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি তখনকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দায়িত্ব দেন। ইমনসহ তার গ্যাং ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে হত্যা করে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে।
সংবাদ সম্মেলন সোহেল চৌধুরীকে হত্যার কারণ জানাতে গিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেছিলেন, 'বনানী ট্রাম্পস ক্লাব নিয়ে সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে ক্লাবটির মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ চৌধুরীর ঝামেলা ছিল। এছাড়া আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এরপর তিনজন মিলে সোহেলকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।'
খন্দকার আল মঈন আরও বলেছিলেন, ট্রাম্পস্ ক্লাবের পাশেই ছিল ওই সময়কার বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ। ট্রাম্পস ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে সারা রাতব্যাপী অসামাজিক কর্মকাণ্ড হতো। ভিকটিম সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটি নিয়ে বারবার ট্রাম্পস ক্লাবের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু সোহেল যে মসজিদ কমিটি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এ কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম এবং আশীষ রায় চৌধুরীর ব্যবসায়িক স্বার্থে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে।
অপরদিকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেক্টিভিটি মেইনটেইন করার জন্য এটিকে সেফ হাউজ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তার সেই স্বার্থেও আঘাত লাগে সোহেলের প্রতিবাদের কারণে। আবার ইমনের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ক্লাবটিকে একমাত্র সেফ হাউজ হিসেবে ব্যবহার করতে। ওই সময়ে যদি ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যেত, তাহলে তারা সবাই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হতো।
সোহেল চৌধুরী ক্লাবটি বন্ধ করতে বারবার চেষ্টা করায় এই সবগুলো গ্রুপের, অর্থাৎ বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের চক্ষুশূলে পরিণত হন। এরপর ২৪ জুলাই ১৯৯৮ সালে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেলের তর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সোহেল চৌধুরীর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ইসলাম, আশিষ রায় চৌধুরী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনকে দিয়ে সোহেলকে হত্যার প্রস্তাব দেয়।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ রায় চৌধুরীর অনুরোধে ইমন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাবে রাজি হন এবং পরবর্তীতে ইমন এই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেন।