পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশে 'অধিকতর সতর্কতা' কাম্য পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন পুলিশ বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে এটি এ ধরনের সংবাদকে 'অতিরঞ্জিত' হিসেবে অভিহিত করেছে। একইসাথে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশে 'অধিকতর সতর্কতার' অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২১ জুন) সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঠানো বিবৃতিতে অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, এসব খবর 'আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অতিরঞ্জিত'।
বিবৃতিতে বলা হয়, "নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশে পাঠকের কাছে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে [আমরা] মনে করি। অথচ কোনো এক রহস্যময় কারণে এক শ্রেণির গণমাধ্যম অতি সুকৌশলে বাংলাদেশ পুলিশকে বিতর্কিত করে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় মেতেছে, যা সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধকারী অপসাংবাদিকতারই নামান্তর বলে পরিগণিত।"
"গণমাধ্যমের এ ধরনের একপেশে আচরণ সাধারণ পাঠকের সাথে প্রতারণারই শামিল," উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
এ সময় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
এ ধরনের 'অপসাংবাদিকতা'র নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, "[এটি] বাংলাদেশ পুলিশের সৎ, নিষ্ঠাবান, পেশাদার ও দেশপ্রেমিক সদস্যদের মনোবল ধ্বংসের অপপ্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয় যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।"
অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে দাবি করেছে, "স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করে নিয়মিত পুলিশ কর্মকর্তাদের চরিত্র হননে ব্যস্ত।"
সংগঠনটি এসব গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বজায় রাখার জন্য গণমাধ্যমকে আহ্বান জানিয়েছে।
"[আমরা] গণমাধ্যমে কোনো খণ্ডিত বা আংশিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ করতে চাই। গণমাধ্যমে কোনো ঘটনার সামগ্রিক চিত্র উঠে আসুক, সত্য উন্মোচিত হোক," বলা হয় বিবৃতিতে।
"জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য [গণমাধ্যমকে] অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোন ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্যও আমরা সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।"
এদিকে সম্প্রতি সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য সামনে এসেছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একাধিক খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় ঈদুল আজহার আগের দিন ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকার খবরকে কেন্দ্র করে। ওই খবরে বলা হয়, পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট, ছেলের নামে একটি বাড়ি এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।
এর আগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একের পর এক অনুসন্ধানে অভিযোগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সম্পদের সন্ধান পায়।
এক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছে সংস্থাটি। ঐ দিন হাজির না হলে তাকে আর সময় দেওয়া হবে না এবং আইনানুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।