মৌসুমের মাঝামাঝিতে রাজশাহীর আম বিক্রি ১৩শ কোটি টাকা
চারঘাটের আমচাষি রাজু আহম্মেদ গতবছর তার ২০ বিঘার বাগান থেকে সাতলাখ টাকার আম বিক্রি করেছিলেন। এবারে আমের ফলন গতবারের মতো ভালো না হলেও দাম বেশি থাকায় ইতোমধ্যে তিনি সাতলাখ টাকার বেশি আম বিক্রি করে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, কোরবানির আগে ও পরে কয়েকদিন ব্যাপক আম বিক্রি হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া গেছে। তবে এখন দাম কিছুটা কমে গেছে।
একই উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুরের আমচাষি আলতাফ হোসেন গতবছর আটবিঘা জমি থেকে দেড় লাখ টাকার আম বিক্রি করেছিলেন। এবার একই জমিতে আমের ফলন কম হওয়া সত্ত্বেও মোটি বিক্রি করেছেন সাড়ে চার লাখ টাকার আম।
আলতাফ হোসেন বলেন, বাগান থেকে আম বিক্রি করেও গতবারের চেয়ে এ বছর মণে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দাম বেশি পেয়েছেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ১৩ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমির আম পাড়া হয়েছে।
অধিদপ্তরের ২৬ জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, জেলায় আমের মোট উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ মেট্রিক টন। এ আমের বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার ৩১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় বাঘায়, প্রায় আট হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। বাঘার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, উপজেলার আম বাগানগুলোতে একটি বাগানেই গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আমের উৎপাদন হয়। তাই কোনো একটি জাতের আম ভালো না এলেও অন্য জাতের আমে সেটা পুষিয়ে নিতে পারেন আমচাষিরা।
রাজশাহীর সবেচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর বাজারে এবার ল্যাংড়া ও খিরসাপাতের দাম মণপ্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে ৩,৮০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
এছাড়া গুটি আম দুই হাজার টাকা, আম্রপালি ৩,২০০ থেকে ৩,৪০০ টাকা ও লক্ষ্মণভোগও দুই হাজার টাকা মণে বিক্রি হয়েছে। তবে এখন বাজারে এসব আম কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, 'এবার আমের ফলন কম হওয়ায় কৃষকেরা শঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু আমের মূল্য বেশি পাওয়ায় সে ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে যাবে।'
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এ বছর গাছে দেরিতে এবং কম পরিমাণে মুকুল এসেছিল। এর কিছুদিন পর শিলাবৃষ্টিতে কিছু মুকুল আবার ঝরেও যায়। অনেক মুকুলে পচন ধরে। এরপর এপ্রিলের তীব্র তাপদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ে। সবশেষে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণেও রাজশাহীর আম এবার বেশ ক্ষতির শিকার হয়েছিল।
আমের মৌসুম এখনো মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে উম্মে ছালমা বলেন, 'পুরো মৌসুম পার হলে কত টাকার আম বেচাকেনা হলো তার সম্পূর্ণ হিসাব পাওয়া যাবে।'