প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রিজার্ভ, ঋণ সহায়তা নিয়ে চুক্তির সম্ভাবনা নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বাজেট সাপোর্ট বা রিজার্ভ সাপোর্টসহ অন্য কোনো বিষয়ে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সেইসাথে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে কোনো ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর নিয়ে আজ রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ২০-২২টি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে ইকোনমিক কোঅপারেশন বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এই এমওইউ এর অধীনে সংশ্লিষ্ট প্যারামিটার ফিল আপ করতে পারলে ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়া যাবে।'
'যেসব এমওইউ স্বাক্ষর হবে, তার মধ্যে চীন থেকে রিজার্ভ সাপোর্ট পাওয়ার মতো কিছু নেই। অফিসিয়ালি আমরা এমন কোনো প্রস্তাব দিয়েছি বলে আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে'- যোগ করেন মন্ত্রী।
রিজার্ভ সাপোর্ট সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী আরও বলেন, 'নানা দেশ আমাদের নানারকম প্রস্তাব দেয়। সব প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করি না। আমাদের প্যারামিটার ফুলফিল করলে সেসব প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করার পর আবারও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা নেইনি।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন দেশ যেভাবে টাকা রাখে, কোনো দেশ বা ব্যাংক চাইলে আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকে টাকা রাখতে পারে। এটা ভিন্ন বিষয়।'
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'দেশের সাউদার্ন রিজিওন ডেভেলপমেন্টের বিষয়ে চীনের সঙ্গে আমরা আলোচনার মধ্যে আছি। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে মোংলা পোর্টের উন্নয়নের বিষয়টিও থাকবে।'
তিস্তা প্রসঙ্গে চীনের সঙ্গে আলোচনা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'তিস্তা বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী। ভারত যৌথ নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমাদের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠাবে। তারা আমাদের টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। যেহেতু এটি ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী, তাই প্রথমে ভারতের প্রস্তাব বিবেচনায় নিতে হবে।'
চীন যদি তিস্তা প্রসঙ্গ আলোচনায় আনে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানান হাছান মাহমুদ।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে তিনি বলেন, 'চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, স্ট্র্যাটেজিক রিলেশন। এটি আরও স্ট্রংগার হবে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সফরে অর্থনীতি, বাণিজ্য, ব্যাংকিং, ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নবম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ, মেডিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পাবলিক হেলথসহ ২০-২২টি এমওইউ স্বাক্ষর হবে। এ সময় যৌথভাবে বাংলাদেশে কিছু প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।'
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি। এছাড়া, অতীতে চীনের সঙ্গে যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সোমবার সকাল ১১টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় তিনি বেইজিংয়ে পৌঁছাবেন। চারদিনের সফরে শেষে ১১ জুলাই দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, '৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন সাক্ষাৎ করবেন। ওইদিন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি আয়োজিত ইনভেস্টমেন্ট সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে তিয়েন আনমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।
পরদিন ১০ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সঙ্গে মিটিং করবেন প্রধানমন্ত্রী।