‘শুনানি বিপক্ষে গেলে দিনব্যাপী অবরোধের’ হুঁশিয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে এবং কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ৪০ মিনিট ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় আগামীকাল আপিল বিভাগের শুনানি শিক্ষার্থীদের দাবির বিপক্ষে গেলে দিনব্যাপী অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
আজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেলে ৪টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি আশুলিয়া থানা পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করে।
'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম ইমন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা কোটা বাতিল নয়, বরং সংস্কার চাই। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক।'
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটাপদ্ধতি পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য দিন ধার্য হয়েছে আগামীকাল বুধবার (১০ জুলাই)।
কালকের শুনানি প্রসঙ্গে ইমন বলেন, 'আমাদের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হলে আগামীকাল থেকে আমরা দিনব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করব।'
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, 'শুনানি আমাদের বিপক্ষে গেলে প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।'
শিক্ষার্থীদের একদফা দাবি হলো, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে সব ধরনের 'অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক' কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করা।
আন্দোলনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮টি বিভাগ-ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৩৭টি বিভাগ-ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন৷ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছে।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
এ সময় রিট আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের জন্য ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্ত করে ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অপমান করার শামিল।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রুলে ঐ পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না — সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরবর্তীকালে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বলা হয়, সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে।